নদীকূলে বসবাস, এই নিয়মিত বিপর্যয়ের সুরক্ষা কী

নিজস্ব প্রতিবেদন , শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫






                                        
                                       

বলার অপেক্ষা রাখে না, নদীভাঙন এ দেশের এক নিয়মিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়। নদীর ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাস করছে দেশের অসংখ্য মানুষ। কখনো নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র হন তারা, কখনো আবার দীর্ঘদিন পর চর জেগে উঠলে সেই চরের নিজস্ব জমি নির্দিষ্ট করতে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে হয় তাদের অন্যের সঙ্গে।

গতকালের যুগান্তরে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার নদী অঞ্চলের মানুষের মর্মান্তিক কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে।

যুগান্তরের প্রতিনিধি সরেজমিন ঘুরে দেখতে পেয়েছেন যমুনার চরাঞ্চলে অবস্থিত শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ কীভাবে নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিবছর এই তিন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ভিটেমাটি হারাচ্ছেন। অনেকের বাড়ি চার থেকে পাঁচবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বেঁচে থাকার সম্বল কৃষিজমিও চলে গেছে নদীগর্ভে। ভিটেমাটিহারা ৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্য জায়গায় বসত গেড়েছেন। সর্বস্বান্ত এসব মানুষ পাচ্ছেন না কোনোরকম নাগরিক সুবিধা। লেখাপড়া করতে পারছে না সন্তানরা। চরাঞ্চলে নেই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঠিকমতো খাদ্য দিতে না পেরে কম বয়সেই বিয়ে দিতে হচ্ছে তাদের। এককথায়, নড়বড়ে ঘরে কোনোরকমে পুষ্টিহীন জীবনযাপন করেন তারা।

নদীভাঙন একটি পুরোনো গ্রামীণ বিপর্যয় হলেও এই নিয়মিত অঘটন থেকে নদীকূলের বাসিন্দাদের রক্ষা করতে সরকারি কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। প্রথমত, নদীভাঙন রোধে নিয়মিত ড্রেজিং কিংবা নদীশাসনে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। দ্বিতীয়ত, ভাঙনের শিকার বিপন্ন মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো হয় না। ব্যাপারটা এমন যে, প্রকৃতির ওপর যেহেতু আমাদের হাত নেই, তাই কী বা করার আছে! অথচ করা যায় অনেক কিছু। বাস্তুচ্যুতদের নতুন বসতবাড়ি স্থাপনের জন্য আর্থিক সহায়তা ছাড়াও তাদের জন্য নানা উপায়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। তবে প্রথম কাজটি হতে হবে অবশ্যই নদীভাঙন রোধ করা। বিশেষ একটি নদী কী উপায়ে শাসন করলে ভাঙন রোধ করা যাবে, তা বের করতে হবে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা চরাঞ্চলের মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন ঠিকই, প্রতিশ্রুতিও দেন; কিন্তু বিজয়ী হয়ে তাদের দিকে ফিরেও তাকান না। অথচ এসব ভোটারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিলে তাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতে পারে। সরকার তথা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এখন থেকে এসব বিষয়ে মনোযোগী হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।