কারও এক হাত নেই, কারও এক পা। অনেকের হাত-পা ছোট। কেউ খর্বকায়। কেউবা হুইলচেয়ারে। সবার হাতে র্যাকেট। খেলছেন জাতীয় প্যারা ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে। বৃহস্পতিবার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু এই টুর্নামেন্টে এমন চিত্র দেখা গেল। প্রায় একশ’ প্যারা শাটলার খেলছেন দুদিনের টুর্নামেন্টে। উদ্বোধন করেন জাতীয় ব্যাডমিন্টনের চার সেরা শাটলার খন্দকার আবদুস সোয়াদ, গৌরব সিংহ, ঊর্মি আক্তার ও নাছিমা খাতুন। তাদের মঞ্চে নিয়ে আসেন ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফ আহমেদ।
প্যারা শাটলারদের উৎসাহ দিতে আসেন জুলাইযোদ্ধা জাভেদ ইকরাম লিওন। গত বছরের ৪ আগস্ট কাওরানবাজারে অফিস থেকে নেমে বাসায় যাওয়ার সময় ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে যোগ দেওয়া জাভেদ বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘এখন আমিও তাদের মতো। তাই তাদের উৎসাহ দিতে এসেছি।’
প্যারা ব্যাডমিন্টনে নতুন নন ইয়ামিন হোসেন। ৪ ফুট ৪ ইঞ্চির উচ্চতার এই শাটলার ২০২৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার ফক্সেস আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বৈতে ব্রোঞ্জ জেতেন। তার সতীর্থ ছিলেন কুয়েতের আবদুল্লাহ। বাহরাইনে আন্তর্জাতিক প্যারা ব্যাডমিন্টনে দুবার ও জাপানে বিশ্ব প্যারা ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন। দুই বছর আগে চীনে প্যারা এশিয়ান গেমসেও খেলেছেন ইয়ামিন। পেশায় চা দোকানি। র্যাকেট হাতে চলে এসেছেন খেলতে। ইয়ামিনের কথায়, ‘আমি বিশ্ব আসরে পদক জিতেছি। র্যাংকিংয়ে উন্নতি করেছি। কিন্তু ২০২৩ সালের পর আর কোথাও খেলার জন্য ডাক পাইনি।’
তিনি যোগ করেন, ‘দোকান চালিয়ে খেলতে আসি। যদি আমাদেরকে বেতন দেওয়া হতো, তাহলে আমরা প্যারা ব্যাডমিন্টনে আরও বেশি সময় দিয়ে দেশের জন্য আরও পদক জিততে পারতাম।’ তার বড় বোনের স্বামী আশরাফ আলী এবার ইয়ামিনের সতীর্থ। তারও উচ্চতা ইয়ামিনের সমান। আশরাফ আলীর কথায়, ‘আমরা খেলতে চাই। সে ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই বিদেশ থেকে আমরা পদক আনতে পারব।’
পাবনার সুজানগরের ছেলে আলমগীর হোসেন মোস্তাকিম। ডান হাত স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট। এ নিয়েই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। পড়ছেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। আলমগীর বলেন, ‘ছোটবেলায় যখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতাম, অনুপ্রেরণার বদলে জুটত মানসিক নির্যাতন। বন্ধুরা বলত, যত ভালো খেলিস না কেন, কখনো ভালো কোনো জায়গায় যেতে পারবি না।’ ভালোই খেলছেন তিনি। আলমগীরের কথায়, ‘সরকার যদি আমাদের জন্য ভালো কিছু করত, তাহলে আমাদের অন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে হতো না। আমরা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চাই। এটা যেন নিয়মিত আয়োজন করা হয়।’
জাতীয় চ্যাম্পিয়ন খন্দকার আবদুস সোয়াদ বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক মানুষেরাই কত কষ্ট করি খেলতে গিয়ে। সেখানে আপনাদের যে কত কষ্ট হয়, জানি। আমাদের শুভেচ্ছা থাকবে আপনাদের সঙ্গে।’ মেয়েদের বিভাগে রানার্সআপ ঊর্মি আক্তারের কথায়, ‘আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে আমরা থাকব।’