চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু কেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক , শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫






                                        
                                       
FILE PHOTO: A nuclear-powered Type 094A Jin-class ballistic missile submarine of the Chinese People's Liberation Army (PLA) Navy is seen during a military display in the South China Sea April 12, 2018. Picture taken April 12, 2018. REUTERS/Stringer

চীন প্রচলিত সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারও বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান জেনারেল অ্যান্থনি কটন গত মার্চে কংগ্রেসকে জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেনাবাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সির এই নির্দেশ ভূমি, আকাশ ও সমুদ্র থেকে ছোড়ার মতো পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।

চীন নিজেদের ২০২৩ সালের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে আবারও স্পষ্ট করে বলেছে, কোনো অবস্থাতেই তারা প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। এই নীতিকে ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ বা প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি বলা হয়। এ নীতিতে বলা হয়েছে, চীন কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধারী নয়, এমন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালাবে না, কিংবা পারমাণবিক হামলার হুমকিও দেবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘পারমাণবিক যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হতে পারে না। এমন যুদ্ধ শুরু করাই উচিত নয়।’ তারা আরও বলেছে, চীন ‘আত্মরক্ষামূলক পারমাণবিক কৌশল’ অনুসরণ করে এবং কঠোরভাবে ‘প্রথম ব্যবহার নয়’ নীতি মেনে চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের (পেন্টাগন) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে ‘প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার’ নীতি ঘোষণা করলেও বাস্তবে চীনের কৌশলে অন্য কিছু থাকতে পারে। চীনের সামরিক সক্ষমতা-সংক্রান্ত পেন্টাগনের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যদি প্রচলিত (নন-নিউক্লিয়ার) কোনো হামলায় চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার বা এর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে, অথবা সে হামলার প্রভাব যদি কার্যত পারমাণবিক হামলার সমান হয়, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে চীন প্রথমেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

এ ছাড়া তাইওয়ান বিষয়ে প্রচলিত সামরিক যুদ্ধে বড় ধরনের পরাজয় যদি কমিউনিস্ট সরকারের টিকে থাকাকেই গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলে, তবে সে ক্ষেত্রেও চীন প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারে।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘বেইজিংকে অপবাদ দিতে ও কলঙ্কিত করতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করতে “চীনের পারমাণবিক হুমকি” নিয়ে যেকোনো ধরনের অপপ্রচারের আমরা বিরোধিতা করি।’

শিকাগোভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা সংস্থা বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টসের তথ্য অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্রধারী অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় চীন নিজেদের অস্ত্রভান্ডার দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছে এবং আধুনিকায়ন করছে। বর্তমানে দেশটির হাতে প্রায় ৬০০ পারমাণবিক ওয়ারহেড মজুত রয়েছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন প্রায় ৩৫০টি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো (ভূগর্ভস্থ বা স্থির উৎক্ষেপণকেন্দ্র) এবং সড়কপথে সরানো যায়, এমন ভ্রাম্যমান উৎক্ষেপণের জন্য একাধিক নতুন ঘাঁটি তৈরি করছে।

ধারণা অনুযায়ী, চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) হাতে বর্তমানে প্রায় ৭১২টি স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণযন্ত্র রয়েছে। তবে এর সব কটিই পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে, এমন নয়। এর মধ্যে প্রায় ৪৬২টি উৎক্ষেপণযন্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম, যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে পারে।

বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টসের মতে, পিএলএর অনেক উৎক্ষেপণযন্ত্র স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। আঞ্চলিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতেই এসব তৈরি করা হয়েছে। তবে এসব উৎক্ষেপণযন্ত্রের বেশির ভাগ পারমাণবিক হামলার উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি।

পেন্টাগনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএলএর ব্যবহার উপযোগী পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারা এমন একটি বড় ও বৈচিত্র্যময় ভান্ডার গড়ে তুলতে চাইছে, যাতে তুলনামূলক কম নির্ভুলভাবে হামলা চালাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টন (মাল্টি-মেগাটন) বিস্ফোরণ ক্ষমতার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) থাকবে।

  • অস্ত্র
  • চীন
  • পারমাণবিক অস্ত্র
  • যুক্তরাষ্ট্র