ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মন্ত্রীরা মঙ্গলবার বুলগেরিয়াকে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ইউরো গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই দিন দেশটি ইউরোজোন বা একক মুদ্রা অঞ্চলের ২১তম সদস্যে পরিণত হবে।
ব্রাসেলস, বেলজিয়াম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গত মাসে ইউরোপীয় কমিশন জানায়, ইইউ’র সবচেয়ে দরিদ্র দেশটি ইউরো গ্রহণের কঠোর শর্ত পূরণ করেছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। প্রায় ৬৪ লাখ জনসংখ্যার বুলগেরিয়া ২০০৭ সালে ইইউতে যোগ দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের ১৯ বছর পর আগামী বছর লেভ ত্যাগ করে ইউরো চালু করবে দেশটি। তবে ইউরোজোনে বুলগেরিয়ার প্রবেশ দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে হয়েছে, গত তিন বছরে দেশটিতে সাতটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের অক্টোবরে।
ইউরো গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পাঠ্য অনুমোদনের পর ব্রাসেলসে বসা ইইউ’র অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে বুলগেরিয়ার আবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন পাবে।
তবে অনেক বুলগেরিয়ান ইউরো গ্রহণের বিরোধিতা করছেন, তাদের আশঙ্কা এটি জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। ইউরোপীয় কমিশনের সিদ্ধান্তের আগে ও পরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক ইউরো গ্রহণে অনিচ্ছুক।
অন্যদিকে, ইউরো সমর্থকরা মনে করেন, এতে বুলগেরিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং নাগরিকদের জীবনমান উন্নত হবে।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতির কারণে মার্কিন মুদ্রার প্রতি আস্থা কমে ইউরোর মান ডলারের তুলনায় বাড়ছে।
ইসিবি প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দে গত মে মাসে ইউরোকে একটি বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পক্ষে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ইউরোর আন্তর্জাতিক ভূমিকা বাড়লে ইইউ সদস্য দেশগুলো কম সুদে ঋণ নিতে পারবে।
ইউরো ক্লাব বড় হচ্ছে : ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম ইউরো নোট ও কয়েন চালুর সময় ১২টি দেশ ইউরোজোনের সদস্য ছিল। এর মধ্যে ছিল ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও গ্রিস।
পরবর্তীতে স্লোভেনিয়া (২০০৭), সাইপ্রাস ও মাল্টা (২০০৮), স্লোভাকিয়া (২০০৯), এস্তোনিয়া (২০১১), লাটভিয়া (২০১৪), এবং লিথুয়ানিয়া (২০১৫) ইউরোজোনে যোগ দেয়। সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়া ২০২৩ সালে ২০তম সদস্য হিসেবে যোগ দেয়।
বুলগেরিয়া আরও আগেই ইউরো গ্রহণ করতে চেয়েছিল কিন্তু তখন দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বেশি থাকায় ব্রাসেলস সম্মতি দেয়নি।
ইউরো গ্রহণে ইচ্ছুক দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতার নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ আবশ্যক। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, সর্বোচ্চ তিনটি ভালো পারফরম্যান্সকারী ইইউ দেশের তুলনায় ১.৫ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতি না থাকা।
২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১২ মাসে বুলগেরিয়ার গড় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ২.৭ শতাংশ, যা নির্ধারিত সীমার নিচে বলে জুন মাসে ব্রাসেলস জানায়।