ইসরাইলে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল

নিজস্ব প্রতিবেদক , শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫






                                        
                                       

গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা ঘটেছে ইসরাইলে। দাবানল নিয়ন্ত্রেণে এলেও পরিস্থিতি এখনো সামাল দিতে পারেনি দেশটি। ভয়াবহ এ আগুনে প্রায় ৫ হাজার একর (২০ বর্গকিলোমিটার) এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দেশটির ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভয়ংকর এ অগ্নিকাণ্ডে কোনো বাড়িঘর বা মানুষের বসতি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগের মুখপাত্র তাল ভোলভোভিচ বলেছেন, এই আগুনকে অলৌকিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়লেও তীব্র চেষ্টায় তা বসতবাড়ি থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়েছে। দাবানলটি কীভাবে শুরু হয়েছে, তা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তবে গ্রীষ্মকালে খরা ও প্রচণ্ড গরমের কারণে ইসরাইলের বনাঞ্চল অত্যন্ত শুষ্ক ও আগুন ছড়ানোর উপযোগী হয়ে ওঠে।

প্রসঙ্গত, বুধবার জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত এশতাওল বনে বিশাল আকারের দাবানলের সূত্রপাত হয়। গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া এবং তীব্র বাতাসের কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জেরুজালেমের আকাশ ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। পাইন বনাঞ্চল জ্বলতে থাকে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। দাবানলে ৫ হাজার একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এটিকে ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক অগ্নিকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন কর্মকর্তারা। জেরুজালেমের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগের বিভাগীয় কমান্ডার সুমিলিক ফ্রিডম্যান বলেছেন, আমরা একটি বিশাল দাবানলের মুখোমুখি হয়েছি।

ইসরাইলের বন ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, দাবানলের দ্রুত বিস্তার হওয়া সম্ভব হয়েছে কারণ, এ শীত মৌসুমে বৃষ্টিপাত খুব কম হয়েছে এবং আবহাওয়া অত্যন্ত গরম ও শুষ্ক ছিল। তাছাড়া অত্যন্ত শক্তিশালী বাতাসের কারণে আগুনের দিক পরিবর্তন হতে থাকে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এর আগে ইসরইলের জুয়িশ ন্যাশনাল ফান্ডের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পরিচালক আনাত গোল্ড জানিয়েছেন, ‘তাদের কর্মীরা আগুন থামানোর জন্য জমি পরিষ্কার এবং ফায়ার ব্রেক তৈরি করতে সংগ্রাম করছেন।’ গোল্ড আরও বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন যা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমিয়ে দিয়েছে। দাবানলের তীব্রতায় ভূমিকা রেখেছে।’

দাবানলের কারণে বহু বনভূমি, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং কিছু কৃষিজমিও পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের শতাধিক ইউনিট এবং একাধিক বিমান ব্যবহার করা হয়। ইসরাইলি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ১২০টি অগ্নিনির্বাপক ও উদ্ধারকারী দল দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার ইউনিটও অভিযানে সহায়তা করছে।

পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। এছাড়া কিছু এলাকায় অস্থায়ীভাবে চলাচলে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন দাবানলের ঘটনা আগের চেয়ে অনেক ঘনঘন ঘটছে। ইসরাইলের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল, বিশেষ করে পাহাড়ি ও বনাঞ্চলঘেরা এলাকাগুলো এখন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গ্রীষ্মের খরার সময় এ অঞ্চলগুলোয় দাবানলের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর ছোট কোনো অগ্নিকাণ্ড মুহূর্তেই ভয়াবহ রূপ নেয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছেন। তারা বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় যা যা করা দরকার, সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ ইউনিট। এই অগ্নিকাণ্ড দেশের জন্য শুধু পরিবেশগত ক্ষতি নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্ক সংকেতও বয়ে এনেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এর থেকে উদ্ভূত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এখন আরও সচেতনতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এর আগে ২০১০ সালে ইসরাইলের উত্তরে মাউন্ট কারমেলে একটি ভয়াবহ দাবানল ৪ দিন ধরে জ্বলে। যাতে ৪৪ জনের প্রাণহানি এবং ১২ হাজার একর বনাঞ্চল পুড়ে যায়। বর্তমান দাবানল যদিও অতটা প্রাণঘাতী হয়নি। তবুও এটি একটি কঠিন সংকেত হিসাবে কাজ করছে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।

  • ইসরাইল
  • দাবানল