গত সরকারের সব নৃশংসতার বিচার কাম্য

নিজস্ব প্রতিবেদক , বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫






                                        
                                       

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক আন্দোলন দমন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধ করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য গুম-খুনকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। বিরোধী মত দমনে তারা যে কতটা নৃশংস ছিল, একে একে সেসব তথ্য বের হয়ে আসছে। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সে বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তার নেতাকর্মীদের বুলেটে ১ হাজার ৫৮১ জন শহিদ হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিল শিশু। এছাড়া গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আরও ছয়জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। পাশাপাশি জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ১৯৯ জন নিহত এবং ৬ হাজার ৯৭৯ জন আহত হয়। এমনকি হাসিনার ক্ষমতার শেষ পাঁচ মাসেও অন্তত ২০ জনকে গুম করা হয়েছিল।

সোমবার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তিনটি ভাগে ভাগ করা ৫৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে এসব তথ্য ছাড়াও বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে সব রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে পরিণত করেছিল আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে। এ সময়ে আওয়ামী সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থাকেও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করে। এর মাধ্যমে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অস্বচ্ছ, বিতর্কিত ও প্রহসনমূলক করে কেড়ে নেয় জনগণের ভোটাধিকার পর্যন্ত। এ সময়ে নাগরিকদের বাক, চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিবর্তনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে বাক্ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নাগরিক স্বাধীনতাকেও ক্ষুণ্ন করা হয়েছে পদে পদে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক এবং দুর্বৃত্তদের হামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে অনেক সাংবাদিককে। এসব তথ্যও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জুলাই বিপ্লবসহ বিগত সরকারের আমলে গুম-খুনের শুধু নির্দেশদাতাই নয়, যারা তা কার্যকর করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করি আমরা। একই সঙ্গে প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় তা হবে প্রত্যেক আত্মত্যাগকারী শহিদের প্রতি চরম অন্যায়। দেড় দশক স্বৈরাচারী শাসনের শৃঙ্খল থেকে এ দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে যে অকুতোভয় বীররা জীবনের মায়া ত্যাগ করতে দ্বিধা করেনি, নায্যবিচার পাওয়া তাদের অধিকার। এ অধিকার পূরণ করতে ব্যর্থ হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। ব্যর্থতার এ লজ্জা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের মাথা শুধু নুইয়েই দেবে না, প্রত্যেক দেশপ্রেমীর বিবেক প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে পুরোনো সব কালিমা মোচনে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।