১৬ বছর পর কেন ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা?

নিজস্ব প্রতিবেদক , রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫






                                        
                                       

বাংলাদেশে ১৬ বছর পর আবারো শুরু হচ্ছ পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা৷ এবার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে৷

১৬ বছর পর কেন ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা?

13 ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে ১৬ বছর পর আবারো শুরু হচ্ছ পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা৷ এবার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে৷

https://p.dw.com/p/4ykta

বই হাতে শিক্ষার্থীরা
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য চলতি বছর চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা৷ ফাইল ফটো৷ছবি: bdnews24

প্রাথমিকের (পঞ্চম শ্রেণি) বৃত্তি পরীক্ষার সাম্ভব্য সময় বলা হয়েছে চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর৷ আর চলতি বছরের ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে৷

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার বিষয় এবং নম্বর বন্টনও প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর৷ তাতে বলা হয়েছে, মোট চারটি বিষয়ে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ বিষয়গুলো হলো, বাংলা ,ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান৷ প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতিটি বিষয়য়ে পরীক্ষার সময় হবে দুই ঘন্টা ৩০ মিনিট৷

এই পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রেজিস্টারভুক্ত স্বতন্ত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেবে৷ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

বেসরকারি ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে না৷ আর যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে তাদের সব শিক্ষার্থীর জন্যও এটা উন্মুক্ত নয়৷ পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সার্বোচ্চ ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পরবে৷

এদিকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর৷ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে পঞ্চম শ্রেণির সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী৷ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আদেশে কুরআন মাজিদ ও আকাইদ-ফিকহ, আরবি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র), বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান-এই পাঁচ বিষয়ে মোট ৫০০ নাম্বারের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে৷

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বাইরে থাকা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না৷

১৬ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষা চালু করতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে৷

অভিবাবক এবং শিক্ষাবিদদের কেউ বলছেন, বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা এবং মেধার মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে৷ তাছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুত্বও বাড়বে বলেও ধারণা করছেন তারা৷

অপরদিকে কেউ কেউ বলছেন, এধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ তৈরি করবে৷

১৬ বছর পর কেন ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা?

13 ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে ১৬ বছর পর আবারো শুরু হচ্ছ পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা৷ এবার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে৷

https://p.dw.com/p/4ykta

বই হাতে শিক্ষার্থীরা
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য চলতি বছর চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা৷ ফাইল ফটো৷ছবি: bdnews24

প্রাথমিকের (পঞ্চম শ্রেণি) বৃত্তি পরীক্ষার সাম্ভব্য সময় বলা হয়েছে চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর৷ আর চলতি বছরের ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে৷

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার বিষয় এবং নম্বর বন্টনও প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর৷ তাতে বলা হয়েছে, মোট চারটি বিষয়ে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ বিষয়গুলো হলো, বাংলা ,ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান৷ প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতিটি বিষয়য়ে পরীক্ষার সময় হবে দুই ঘন্টা ৩০ মিনিট৷

এই পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রেজিস্টারভুক্ত স্বতন্ত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেবে৷ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

বেসরকারি ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে না৷ আর যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে তাদের সব শিক্ষার্থীর জন্যও এটা উন্মুক্ত নয়৷ পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সার্বোচ্চ ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পরবে৷

এদিকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর৷ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে পঞ্চম শ্রেণির সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী৷ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আদেশে কুরআন মাজিদ ও আকাইদ-ফিকহ, আরবি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র), বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান-এই পাঁচ বিষয়ে মোট ৫০০ নাম্বারের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে৷

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বাইরে থাকা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না৷

১৬ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষা চালু করতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে৷

অভিবাবক এবং শিক্ষাবিদদের কেউ বলছেন, বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা এবং মেধার মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে৷ তাছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুত্বও বাড়বে বলেও ধারণা করছেন তারা৷

অপরদিকে কেউ কেউ বলছেন, এধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ তৈরি করবে৷

শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে: মোহাম্মদ শাসুদ্দিন মাসুদ

01:56

এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে শনিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি৷

এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ছেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টের স্কুল ও কলেজ ঐক্য পরিষদ৷ দাবি আদায়ে এরইমধ্যে সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তারা৷

উল্লেখ্য, তার আগে ২০২২ সালেও  বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো৷ সমালোচনার মুখে সেসময় তা আর করা হয়নি৷ তখন দেশের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষাবিদ এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন৷ তারা বলেন, ‘‘এই বৃত্তি পরীক্ষার কার্যক্রমে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এছাড়া এই পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে৷’’

‘মেধার মুল্যায়ন দরকার’

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা অভিভাবক জেসমিন লিপি মনে করেন, বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনসিকতা তৈরি করবে যা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন৷ ডয়চে ভেলেকে এই অভিভাবক বলেন, ‘‘আসলে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার৷ মেধার মূল্যায়ন দরকার৷ বৃত্তি পরীক্ষা সেই সুযোগ করে দেবে৷’’

তার মতে, যারা ভালো ফলাফল করবে তাদের সুযোগ দেওয়া  এবং স্বীকৃতি দেওয়া উচিত৷

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির একজন নেতাও বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালু করার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ তার যুক্তি, এই পরীক্ষার মাধমে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটবে৷

ডয়চে ভেলেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শাসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘‘আসলে বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনা একটি ভালো উদ্যোগ৷ এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে৷ তাদের মেধার বিকাশ ঘটবে৷”

অবশ্য এই পরীক্ষা চালুর পক্ষে একটি অর্থনৈতিক বিষয়ও দেখছেন তিনি৷ তার মতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা অধিকাংশই অস্বচ্ছল পরিবারের৷ বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করা যাবে৷

তাছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুত্ব বাড়বে এবং এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী আবার এই ধরনের বিদ্যালয়ে ফিরে আসবে বলেও মনে করেন তিনি৷

১৬ বছর পর কেন ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা?

13 ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে ১৬ বছর পর আবারো শুরু হচ্ছ পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা৷ এবার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে৷

https://p.dw.com/p/4ykta

বই হাতে শিক্ষার্থীরা
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য চলতি বছর চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা৷ ফাইল ফটো৷ছবি: bdnews24

প্রাথমিকের (পঞ্চম শ্রেণি) বৃত্তি পরীক্ষার সাম্ভব্য সময় বলা হয়েছে চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর৷ আর চলতি বছরের ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে৷

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার বিষয় এবং নম্বর বন্টনও প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর৷ তাতে বলা হয়েছে, মোট চারটি বিষয়ে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ বিষয়গুলো হলো, বাংলা ,ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান৷ প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতিটি বিষয়য়ে পরীক্ষার সময় হবে দুই ঘন্টা ৩০ মিনিট৷

এই পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রেজিস্টারভুক্ত স্বতন্ত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেবে৷ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

বেসরকারি ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে না৷ আর যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে তাদের সব শিক্ষার্থীর জন্যও এটা উন্মুক্ত নয়৷ পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সার্বোচ্চ ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পরবে৷

এদিকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর৷ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে পঞ্চম শ্রেণির সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী৷ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আদেশে কুরআন মাজিদ ও আকাইদ-ফিকহ, আরবি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র), বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান-এই পাঁচ বিষয়ে মোট ৫০০ নাম্বারের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে৷

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বাইরে থাকা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না৷

১৬ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষা চালু করতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে৷

অভিবাবক এবং শিক্ষাবিদদের কেউ বলছেন, বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা এবং মেধার মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে৷ তাছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুত্বও বাড়বে বলেও ধারণা করছেন তারা৷

অপরদিকে কেউ কেউ বলছেন, এধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ তৈরি করবে৷

শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে: মোহাম্মদ শাসুদ্দিন মাসুদ

01:56

এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে শনিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি৷

এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ছেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টের স্কুল ও কলেজ ঐক্য পরিষদ৷ দাবি আদায়ে এরইমধ্যে সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তারা৷

উল্লেখ্য, তার আগে ২০২২ সালেও  বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো৷ সমালোচনার মুখে সেসময় তা আর করা হয়নি৷ তখন দেশের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষাবিদ এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন৷ তারা বলেন, ‘‘এই বৃত্তি পরীক্ষার কার্যক্রমে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এছাড়া এই পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে৷’’

‘মেধার মুল্যায়ন দরকার’

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা অভিভাবক জেসমিন লিপি মনে করেন, বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনসিকতা তৈরি করবে যা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন৷ ডয়চে ভেলেকে এই অভিভাবক বলেন, ‘‘আসলে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার৷ মেধার মূল্যায়ন দরকার৷ বৃত্তি পরীক্ষা সেই সুযোগ করে দেবে৷’’

তার মতে, যারা ভালো ফলাফল করবে তাদের সুযোগ দেওয়া  এবং স্বীকৃতি দেওয়া উচিত৷

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির একজন নেতাও বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালু করার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ তার যুক্তি, এই পরীক্ষার মাধমে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটবে৷

ডয়চে ভেলেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শাসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘‘আসলে বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনা একটি ভালো উদ্যোগ৷ এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে৷ তাদের মেধার বিকাশ ঘটবে৷”

অবশ্য এই পরীক্ষা চালুর পক্ষে একটি অর্থনৈতিক বিষয়ও দেখছেন তিনি৷ তার মতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা অধিকাংশই অস্বচ্ছল পরিবারের৷ বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করা যাবে৷

তাছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুত্ব বাড়বে এবং এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী আবার এই ধরনের বিদ্যালয়ে ফিরে আসবে বলেও মনে করেন তিনি৷

এই ধরনের বৃত্তি পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নাই: অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান

02:49

এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য তৈরির হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আগে যখন বৃত্তি পরীক্ষা ছিলো তখনো তো সবাই পরীক্ষা দিত না৷ ক্লাশের ভালো শিক্সার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষা দিতো৷ তখন  তো বৈষম্য বা মানসিক দেয়ালের প্রশ্ন উঠেনি৷ তাহলে এখন কেন উঠবে৷ তবে সরকার চাইলে এটা প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে৷ তবে তখন তো সেটা আবার একটা পাবলিক পরীক্ষার মতো হয়ে যাবে৷ সেটা একটা সমস্যা৷ আর বেসরকারি স্কুলে তো বিত্তশালীদের ছেলেমেয়েরা পড়ে৷ তাদের জন্য তো বৃত্তি দরকার নাই৷’’

বৈষম্য আর কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ম বাড়ার আশঙ্কা

ঢাকার আরেক অবিভাবক আসিফ সুমিত বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘আসলে এটা  বৈষম্যমূলক৷ একই সঙ্গে শিশুদের মধ্যে বাড়তি চাপ তৈরি করবে৷ এটা নিয়ে আবার সামাজিকভাবেও শিশুরা নানা প্রশ্নের মুখে পড়বে৷ আর এমনিতেই কোচিং সেন্টার বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ এর ফলে আরো বাড়বে৷’’

তার মতে, সরকারের উচিত হবে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা৷ তার জন্য যাদের আর্থিক সক্ষমতা কম তাদের নানা ধরনের সহায়তা করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷ সরকার এখন যেমন বিনামূল্যে বই দেয়,  সরকারি প্রাথমিক অবৈতনিক৷ আরো এমন সহায়তা করা যায় বলে মত দেন এই অভিভাবক৷

এদিকে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার বৈষয়টিকে ‘অহেতুক’ বলে মনে করছেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান অবশ্য৷ তার মতে, বৃত্তির সাথে আর্থিক লেনদেনের বিষয় জড়িত থাকায় শিক্ষা প্রসাশনের কেউ কেউ কেউ বেশি আগ্রহী৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের বৃত্তি পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নাই৷ এটা অহেতুক করা হচ্ছে৷ প্রয়োজন হচ্ছে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা৷ সেটার জন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এসব করা হচ্ছে৷ এর ভিতরে আর্থিক লেনদেনের বিষয় থাকায় শিক্ষা প্রশাসনের কেউ কেউ এটা নিয়ে অতি আগ্রহী৷”

তার মতে , ‘‘এটা সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি ছাড়াও শিশুদের মধ্যে নতুন মানসিক চাপ তৈরি করবে৷ একটা পার্থক্য তৈরি হবে৷ কারুর মধ্যে হীনমন্যতা  তৈরি হবে৷ শিশুদের এসবের বাইরে রেখে ভালো শিক্ষারব্যবস্থা করা দরকার৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আবার সরকারি প্রাথমিকের মধ্যেও বৈষম্য হবে৷ এক গ্রুপ শিক্ষার্থী পরীক্ষাই দিতে পারবে না৷ আবার যারা দিতে পারবে তাদের সবাই বৃত্তি পাবে না৷ তাদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই একটা বিভাজনের মধ্যে ফেলে দেয়া হবে৷,” বলেন তিনি৷

তার কথা, ‘‘পাবলিক পরীক্ষায় ফার্ষ্ট, সেকেন্ডের পদ্ধতি তুলে দিয়ে গ্রেডিং পদ্ধতি হয়েছে শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে৷ বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনলে আবার আমরা ফার্ষ্ট সেকেন্ডের যুগে ফিরে যাব৷ এটা ঠিক বলে মনে করি না৷ সরকার গরিব শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে চাইলে তার তো পদ্ধতি আছে৷ মেধাবীদের স্বীকৃতি দেয়ারও পদ্ধতি আছে৷ সেটা তো বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে করার দরকার নাই৷’’

আর এই ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা  কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ম্য আরো বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন তিনি৷

সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর দাবি

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ ভাগই বেসরকারি৷

সেই হিসেবে, বৃত্তি পরীক্ষা চালুর এই উদ্যোগ শতকরা তিন ভাগ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিচ্ছে৷ এরকারণে বেসরকারি স্কুলগুলোর পক্ষ থেকে এরইমধ্যে সরকারের কাছে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে৷

১৬ বছর পর কেন ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা?

13 ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে ১৬ বছর পর আবারো শুরু হচ্ছ পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা৷ এবার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে৷

https://p.dw.com/p/4ykta

বই হাতে শিক্ষার্থীরা
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য চলতি বছর চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা৷ ফাইল ফটো৷ছবি: bdnews24

প্রাথমিকের (পঞ্চম শ্রেণি) বৃত্তি পরীক্ষার সাম্ভব্য সময় বলা হয়েছে চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর৷ আর চলতি বছরের ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে৷

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার বিষয় এবং নম্বর বন্টনও প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর৷ তাতে বলা হয়েছে, মোট চারটি বিষয়ে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ বিষয়গুলো হলো, বাংলা ,ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান৷ প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতিটি বিষয়য়ে পরীক্ষার সময় হবে দুই ঘন্টা ৩০ মিনিট৷

এই পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রেজিস্টারভুক্ত স্বতন্ত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেবে৷ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

বেসরকারি ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে না৷ আর যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে তাদের সব শিক্ষার্থীর জন্যও এটা উন্মুক্ত নয়৷ পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সার্বোচ্চ ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পরবে৷

এদিকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর৷ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে পঞ্চম শ্রেণির সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী৷ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আদেশে কুরআন মাজিদ ও আকাইদ-ফিকহ, আরবি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র), বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান-এই পাঁচ বিষয়ে মোট ৫০০ নাম্বারের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে৷

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বাইরে থাকা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না৷

১৬ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষা চালু করতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে৷

অভিবাবক এবং শিক্ষাবিদদের কেউ বলছেন, বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা এবং মেধার মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে৷ তাছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুত্বও বাড়বে বলেও ধারণা করছেন তারা৷

অপরদিকে কেউ কেউ বলছেন, এধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ তৈরি করবে৷

শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে: মোহাম্মদ শাসুদ্দিন মাসুদ

01:56

এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে শনিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি৷

এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ছেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টের স্কুল ও কলেজ ঐক্য পরিষদ৷ দাবি আদায়ে এরইমধ্যে সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তারা৷

উল্লেখ্য, তার আগে ২০২২ সালেও  বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো৷ সমালোচনার মুখে সেসময় তা আর করা হয়নি৷ তখন দেশের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষাবিদ এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন৷ তারা বলেন, ‘‘এই বৃত্তি পরীক্ষার কার্যক্রমে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এছাড়া এই পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে৷’’

‘মেধার মুল্যায়ন দরকার’

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা অভিভাবক জেসমিন লিপি মনে করেন, বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনসিকতা তৈরি করবে যা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন৷ ডয়চে ভেলেকে এই অভিভাবক বলেন, ‘‘আসলে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার৷ মেধার মূল্যায়ন দরকার৷ বৃত্তি পরীক্ষা সেই সুযোগ করে দেবে৷’’

তার মতে, যারা ভালো ফলাফল করবে তাদের সুযোগ দেওয়া  এবং স্বীকৃতি দেওয়া উচিত৷

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির একজন নেতাও বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালু করার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ তার যুক্তি, এই পরীক্ষার মাধমে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটবে৷

ডয়চে ভেলেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শাসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘‘আসলে বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনা একটি ভালো উদ্যোগ৷ এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে৷ তাদের মেধার বিকাশ ঘটবে৷”

অবশ্য এই পরীক্ষা চালুর পক্ষে একটি অর্থনৈতিক বিষয়ও দেখছেন তিনি৷ তার মতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা অধিকাংশই অস্বচ্ছল পরিবারের৷ বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করা যাবে৷

তাছাড়া বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুত্ব বাড়বে এবং এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী আবার এই ধরনের বিদ্যালয়ে ফিরে আসবে বলেও মনে করেন তিনি৷

এই ধরনের বৃত্তি পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নাই: অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান

02:49

এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য তৈরির হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আগে যখন বৃত্তি পরীক্ষা ছিলো তখনো তো সবাই পরীক্ষা দিত না৷ ক্লাশের ভালো শিক্সার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষা দিতো৷ তখন  তো বৈষম্য বা মানসিক দেয়ালের প্রশ্ন উঠেনি৷ তাহলে এখন কেন উঠবে৷ তবে সরকার চাইলে এটা প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে৷ তবে তখন তো সেটা আবার একটা পাবলিক পরীক্ষার মতো হয়ে যাবে৷ সেটা একটা সমস্যা৷ আর বেসরকারি স্কুলে তো বিত্তশালীদের ছেলেমেয়েরা পড়ে৷ তাদের জন্য তো বৃত্তি দরকার নাই৷’’

বৈষম্য আর কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ম বাড়ার আশঙ্কা

ঢাকার আরেক অবিভাবক আসিফ সুমিত বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘আসলে এটা  বৈষম্যমূলক৷ একই সঙ্গে শিশুদের মধ্যে বাড়তি চাপ তৈরি করবে৷ এটা নিয়ে আবার সামাজিকভাবেও শিশুরা নানা প্রশ্নের মুখে পড়বে৷ আর এমনিতেই কোচিং সেন্টার বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ এর ফলে আরো বাড়বে৷’’

তার মতে, সরকারের উচিত হবে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা৷ তার জন্য যাদের আর্থিক সক্ষমতা কম তাদের নানা ধরনের সহায়তা করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷ সরকার এখন যেমন বিনামূল্যে বই দেয়,  সরকারি প্রাথমিক অবৈতনিক৷ আরো এমন সহায়তা করা যায় বলে মত দেন এই অভিভাবক৷

এদিকে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার বৈষয়টিকে ‘অহেতুক’ বলে মনে করছেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান অবশ্য৷ তার মতে, বৃত্তির সাথে আর্থিক লেনদেনের বিষয় জড়িত থাকায় শিক্ষা প্রসাশনের কেউ কেউ কেউ বেশি আগ্রহী৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের বৃত্তি পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নাই৷ এটা অহেতুক করা হচ্ছে৷ প্রয়োজন হচ্ছে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা৷ সেটার জন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এসব করা হচ্ছে৷ এর ভিতরে আর্থিক লেনদেনের বিষয় থাকায় শিক্ষা প্রশাসনের কেউ কেউ এটা নিয়ে অতি আগ্রহী৷”

তার মতে , ‘‘এটা সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি ছাড়াও শিশুদের মধ্যে নতুন মানসিক চাপ তৈরি করবে৷ একটা পার্থক্য তৈরি হবে৷ কারুর মধ্যে হীনমন্যতা  তৈরি হবে৷ শিশুদের এসবের বাইরে রেখে ভালো শিক্ষারব্যবস্থা করা দরকার৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আবার সরকারি প্রাথমিকের মধ্যেও বৈষম্য হবে৷ এক গ্রুপ শিক্ষার্থী পরীক্ষাই দিতে পারবে না৷ আবার যারা দিতে পারবে তাদের সবাই বৃত্তি পাবে না৷ তাদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই একটা বিভাজনের মধ্যে ফেলে দেয়া হবে৷,” বলেন তিনি৷

তার কথা, ‘‘পাবলিক পরীক্ষায় ফার্ষ্ট, সেকেন্ডের পদ্ধতি তুলে দিয়ে গ্রেডিং পদ্ধতি হয়েছে শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে৷ বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনলে আবার আমরা ফার্ষ্ট সেকেন্ডের যুগে ফিরে যাব৷ এটা ঠিক বলে মনে করি না৷ সরকার গরিব শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে চাইলে তার তো পদ্ধতি আছে৷ মেধাবীদের স্বীকৃতি দেয়ারও পদ্ধতি আছে৷ সেটা তো বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে করার দরকার নাই৷’’

আর এই ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা  কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ম্য আরো বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন তিনি৷

সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর দাবি

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ ভাগই বেসরকারি৷

সেই হিসেবে, বৃত্তি পরীক্ষা চালুর এই উদ্যোগ শতকরা তিন ভাগ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিচ্ছে৷ এরকারণে বেসরকারি স্কুলগুলোর পক্ষ থেকে এরইমধ্যে সরকারের কাছে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে৷

বৃত্তি শুধু গরিব ও মেধাবীদের জন্য নয়: এম ইকবাল বাহার চৌধুরী

02:58

তাদের দাবি,  বৃত্তি পরীক্ষা সব ধরনের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য করতে হবে৷ আর সম্ভব হলে শিক্ষার্থীর জন্য জন্য উন্মুক্ত করতে হবে৷ তা না হলে চরম বৈষম্য সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা তাদের৷

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টের স্কুল ও কলেজ ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম ইকবাল বাহার চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে এক কোটি শিশু পড়াশোনা করে৷ তাদের বৃত্তি পরীক্ষার বাইরে রাখার তৎপরতা নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করবে৷ এটা যারা করছেন তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে৷ এটা সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এবং সব শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত করার দাবী আমাদের৷”

তার কথা, ‘‘বৃত্তি শুধু গরিব ও মেধাবীদের জন্য নয়৷ এটা সবার জন্য৷ এটা মেধা যাচাইয়ের একটি পদ্ধতি৷ গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য তো উপবৃত্তি চালু আছে৷ সেটা নিয়ে আমরা কোনো কথা বলছিনা৷”

“আমরা প্রাথমিক শিক্ষার মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দিয়েছি৷ আমরা মানব বন্ধন করেছি৷ প্রয়োজনে আরো বড় আন্দোলনে যাবে৷ সেখানে কিন্তু শিশুরা মাঠে নামবে৷ কারণ তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘর করা হয়েছে৷’’