গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্য জব্বারের বলীখেলা, বাচ্চাদের চড়ুইভাতি রান্না, অন্যপাশে গ্রামীণ এক নারী মেঝেতে বসে নিজহাতে শীতলপাটি বুনছেন। এর পাশাপাশি দেখা গেল গরুদৌড় প্রতিযোগিতা, কিছু মানুষ হা-ডু-ডু খেলছেন। আরেকটু দূরেই সাঁকো পার হচ্ছেন কয়েকজন কিশোর। সাইকেলের চাকা দিয়ে খেলা করছেন আরেকজন। এ যেন কয়েক দশক আগের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের মহাসম্মিলন।
গ্রামীণ জনপদের এ হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলোর দেখা মিলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত একটি স্ক্রলচিত্র প্রদর্শনীতে।
‘গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যমালা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন রাবির চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবাহান (হীরা সোবাহান)। পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আগমনী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২ ফুট প্রস্থের এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে এর আগে কখনো এতবড় স্ক্রলচিত্র প্রদর্শিত হয়নি বলে জানান অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান।
নিজের এই একক প্রদর্শনীর বিষয়ে অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান বলেন, আমরা চারুশিল্পীরা রঙ ও তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাস রাঙিয়ে তুলি। যেখানে ফুটে উঠে আমাদের প্রকৃতি, আমাদের গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্য এবং লোকজ সংস্কৃতি। একজন চারুশিল্পী হিসেবে আমিও এসব বিষয়বস্তকে নিয়ে দুই মাসের প্রচেষ্টায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২ ফুট প্রস্থের (মিশ্রমাধ্যম) একটি স্ক্রলচিত্র অঙ্কন করেছি।
তিনি আরও বলেন, স্ক্রলচিত্রটিতে স্থান পেয়েছে দেশের গ্রামবাংলার হারানো লোকজ ঐতিহ্য। বিভিন্ন উৎসব (বাংলা নববর্ষ, নবান্ন, পৌষসংক্রান্তি), কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, লোকমেলা, লোকসংগীত, লোকসাহিত্য, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, শৈশব, মাছধরা, প্রাত্যহিক ব্যবহৃত বিষয়বস্তু ইত্যাদি। আমার জানা মতে, এই পেইন্টিং বাংলাদেশে ইতোপূর্বে প্রদর্শিত হয়নি।
প্রদর্শনীতে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী জানান, স্ক্রলচিত্রটিতে গ্রামবাংলার সব লোকঐতিহ্য ফুটে উঠেছে। শৈশবে যে খেলাধুলা করেছি এই চিত্রকর্ম দেখে মনে হয়েছে ওই সময়ে ফিরে গেছি। গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে আবারও নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।