২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া ‘পুলিশ হত্যা মামলা’য় ১৭ বছরের কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
সম্প্রতি ভুয়া মামলার হয়রানি রোধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংযোজন করা নতুন বিধি মোতাবেক ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন’র মাধ্যমে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রোববার (২০ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত ১৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিমএম ফারহান ইশতিয়াক প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, ‘ফৌজদারি বিধান কোষের ১৭৩(এ) ধারা মোতাবেক অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদন্ত সাপেক্ষ। তদন্তের এই পর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ (১৭ বছর ৩ মাস) জড়িত থাকার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’
এর আগে গত ২০ এপ্রিল ভুয়া মামলা এবং মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিকে পক্ষভুক্ত করার চেষ্টা রোধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নতুন বিধি ১৭৩(ক) সংযোজন করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যপক ড. আসিফ নজরুল।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক) এই নতুন বিধানটিতে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ কমিশনার, এসপি বা কোনো জেলার এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে তিনি যৌক্তিক মনে করলে ইনভেস্টিগেশন অফিসার/তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর সেই মামলার তদন্তের ব্যাপারে প্রাথমিক বা প্রিলিমিনারি ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনাবলে নিরপরাধ ও যার বিরুদ্ধে উক্ত অপরাধের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই, তাদের প্রি ট্রায়াল বা বিচার পূর্ববর্তী স্টেজেই মামলা থেকে রেহাই দিতে পারবেন।’
প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ বিএনপি, জামায়াত ও কোটাবিরোধী ছাত্র-জনতা। ঘটনাস্থল রায়েরবাগের ফুটওভার ব্রিজ ও তার আশপাশ এলাকায় কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েক হাজার আন্দোলনকারীর উপস্থিতি ছিল। গত বছরের ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে একজন আন্দোলনকারী শহীদ হন। ছাত্র-জনতাকে মারধর ও খুন-জখম করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের সন্ত্রাসীরা যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজ ও তার আশপাশের এলাকা দখলে নেন। এ সময় অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের মধ্যে কে বা কারা মৃত পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ফুটওভার ব্রিজের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে এবং তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। এ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পুলিশ আটজনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১৬নং আসামি শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে গ্রেফতার করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি ও পারিপার্শ্বিকতায় এ মামলার ঘটনায় আসামি শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ, ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণ, ফরেনসিক পরীক্ষা ও বিচার্য বিষয় প্রমাণের জন্য অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি যাচাই করা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু আদালত ইতোমধ্যে এ মামলার আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে শিশু হিসাবে ঘোষণা করেছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পর তাকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করলে শিশু তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে শিশু পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছে মর্মে তদন্তে জানা যায়। এক্ষেত্রে তার চাপমুক্তভাবে বেড়ে ওঠা, স্বাভাবিক পরিবেশে পড়াশোনা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। এজন্য সরকার কর্তৃক জারিকৃত গেজেট অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ১৭৩ (ক) ধারার আলোকে মামলা চলমান অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিধান রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তদন্তাধীন মামলার দায় থেকে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে দ্রুত অব্যাহতি প্রদান করে অন্তর্বর্তীকালীন পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। মামলাটি চাঞ্চল্যকর এবং তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হওয় সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য এজাহারভুক্ত আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ (১৭ বছর ৩ মাস) কে পেনাল কোডের সাতটি ধারার অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।