যমুনার পাড়ে চা দোকানে পাঠাগার!

নিজস্ব প্রতিবেদন , রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫






                                        
                                       

নানা বয়সির মিলন মেলা চায়ের দোকান। চা খাওয়ার ফাঁকে চলে আড্ডাও। চলে টিভি দেখাও। এলাকা ও দেশ-বিদশের বিভিন্ন ইস্যু হয় আলোচনার বিষয়বস্তু। গ্রামের চায়ের দোকানগুলো ঘুরলে এমন চিত্রই দেখা যাবে।

গ্রামের একটি চা দোকানে যদি টেলিভিশন না দেখেন, এমনকি আড্ডা না মেরে যদি সবাইকে বই পড়ায় মনোযোগী দেখেন, তাহলে তো মনে খটকা লাগবেই। তবে, এ রকমই একটি চায়ের দোকান রয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নলিন বাজারের মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে।

ব্যতিক্রমী এ চা দোকানের মালিক সুজন মিয়া। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সুজনের চায়ের দোকানে বই পড়তে ভিড় করেন স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বয়োজ্যেষ্ঠরাও।

জানা যায়, উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নলিন বাজারের মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত সুজনের চায়ের দোকান। ছায়ানীড় প্রকাশনীর সহযোগিতায় চায়ের দোকানের এক কোণায় শতাধিক বই নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ময়না মুক্ত পাঠাগার’।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুজনের চায়ের দোকানে নেই কোনো টেলিভিশন। এখানে মোবাইল আসক্ত থেকে বের হয়ে কবি, সাহিত্যিক ও বইপ্রেমীরাসহ স্থানীয়রা তাদের পছন্দের বই পড়ে সময় ব্যয় করছেন। চা খেতে আসা লোকজন চা খাওয়ার ফাঁকে বই পড়ছেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ-বিদেশের নানা গুণীজনদের বই রয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিক বলেন, ‘চায়ের দোকানে কখনো এমন ব্যতিক্রমী পাঠাগার দেখেনি।  সুজন আগ্রহ নিয়ে তার দোকানে টেলিভিশনের বদলে স্থাপন করেছেন পাঠাগার। যমুনা পাড়ে এখানে যারা আসেন তাদের বেশিভাগকেই চায়ের ফাঁকে বিভিন্ন বই নিয়ে পড়তে মনোযোগী দেখা যায়। বিষয়টি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। তার এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’

চা বিক্রেতা সুজন বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের এখানে অনেক লোকজন আসেন। তারা আশপাশের দোকানগুলোতে টেলিভিশন দেখা ও মোবাইল ফোন নিয়ে সময় কাটায়। এসব আসক্তি থেকে মানুষকে দূরে রাখতেই দোকানে নিজ উদ্যোগে পাঠাগার স্থাপন করেছি। স্কুল-কলেজ চলাকালীন স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, তরুণ, যুবকসহ বয়োজ্যেষ্ঠরা নিয়মিত বই পড়ে সময় কাটায়। এলাকার মানুষও উৎসাহ দিয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক আনজু আনোয়ারা ময়না বলেন, বর্তমান যুগে উঠতি বয়সি বা তরুণ ও যুব সমাজ ব্যাপকহারে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা বেশিভাগই চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডা দেয়। তাদেরকে বইমুখী করতে চা দোকানি সুজনকে পাঠাগার স্থাপনে পরামর্শ দেই। পরে সে আগ্রহ নিয়ে তার ছোট দোকানে ‘ময়না-মুক্ত’ পাঠাগার স্থাপন করে।

  • kagoj
  • Kagojer patrika
  • Kagojerpatrika
  • patrika
  • patrikakagojer