মাগুরার শিশুটির ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার শুরু ৭ দিনের মধ্যে: আইন উপদেষ্টা

Coder Boss , বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫






                                        
                                       

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার আগামী সাত দিনের মধ্যে শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং-এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, শিশুটি আজ দুপুর ১টার দিকে সিএমএইচে মারা গেছে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা শোক জানিয়েছেন। আমরা সবাই শোকার্ত, এরমধ্যে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা আজকেই পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। শিশুটির মরদেহ দাফনের জন্য মাগুরায় নিয়ে যাওয়া হবে হেলিকপ্টার যোগে। শিশুটির মরদেহ এবং তার পরিবারের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত থাকবেন। তিনি সেখানে দাফন পর্যন্ত থাকবেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিএনএ স্যাম্পল কালেকশন করা হয়ে গেছে, আশা করি আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাবো। এরই মধ্যে ১২-১৩ জনের ১৬১ ধারায় (দণ্ডবিধি) স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী সাত দিনের মধ্যে বিচার কাজ শুরু হবে।’

ড. আসিফ নজরুল বলেন, অতীতে ধর্ষণ মামলায় অব্যাহত শুনানির মাধ্যমে (বিচার শুরু হওয়ার) ৭/৮ দিনের মধ্যে বিচার কাজ শেষ হওয়ার নজির আছে।

তিনি বলেন, আমরা যদি সাত দিনের মধ্যে বিচার কাজ শুরু করতে পারি, আমাদের বিচারকরা সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বিচার করতে পারবেন। কারণ এখানে পারিপার্শ্বিক এত স্বাক্ষ্য রয়েছে, ডিএনএ টেস্ট পাওয়া যাবে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া যাবে-ফলে আমরা আশা করছি খুব দ্রুত সময়ে এই মামলার বিচার হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইন উপদেষ্টা।

শিশু ধর্ষণ মামলার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রেখে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ করা বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জামিনের বিধান কঠোর হচ্ছে। খসড়া আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলা তদন্তের সময় ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন এবং মামলার বিচার কাজ শেষ হওয়ার সময় ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিন করা হচ্ছে। সংশোধিত খসড়া আইন অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তাকেই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা যাবে না।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘গত দুইদিন আপনাদের বলেছি, আমরা একটা নতুন আইন করছি। নতুন আইনের প্রাথমিক খসড়া হয়েছে। অনেক স্টেকহোল্ডার আছে ওনাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। আমরা আশা করছি-আগামী রোববার, খুব দেরি হলে সোমবার, আশা করছি রোববারই নতুন আইন প্রণয়ন করে ফেলব। নতুন আইনে কী থাকছে সেগুলো আপনাদের আগেই বলেছি। এরসঙ্গে যোগ করতে চাই, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে শুধুমাত্র শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনাগুলো দ্রুত উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করার জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছি।’

ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘সংশোধিত আইনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান থাকবে। এ ট্রাইব্যুনালের কাজ হবে শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচার করা, যাতে এটা দ্রুত করা যায়। যাতে এতে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রের মনোযোগ দেওয়া যায়।’

গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে যারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, আপনারা তাদের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো নৈরাজ্য আমরা বরদাস্ত করবো না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে সুনির্দিষ্টভাবে বলবেন। অবশ্যই আমরা সেই ভুলত্রুটির রেসপন্স করবো। জবাবদিহি নিশ্চিত করবো। আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, আমাদের এই বিষয়ে এখন কোনো ভুল নেই। চেষ্টা করবো ভবিষ্যতেও কোনো ভুল হলে সেটি সংশোধন করার জন্য।’

ধর্ষণের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটি বৃহস্পতিবার মারা গেছে। দুপুর ১টায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের শিশুরোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা চলছিল শিশুটির। এরআগে বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারবার ও বৃহস্পতিবার আরও দু‘বার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ) হয় শিশুটির।

আট বছরের শিশুটি ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। অবস্থার আরো অবনতি হলে শনিবার বিকেলে শিশুটিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল।