মধুমাস জ্যৈষ্ঠে রসালো ফলে ছেয়ে গেছে বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক , শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫






                                        
                                       

মিষ্টি ফলের রসে ভরা মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শুরু হয়েছে। রসালো ফলে ছেয়ে যাচ্ছে ফলের দোকান, আড়ত ও ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকান।

জ্যৈষ্ঠ মাসে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, ডেউয়া, লটকন, গোলাপ জাম, বেতফল, গাব, তালশাঁস, জামরুল, আতাফল, কাউ, শরীফা প্রভৃতি ফল পাওয়া যায়। এগুলো সবই দেশি ফল। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব ফল আড়তদারসহ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পৌঁছে যায়। নতুন করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনলাইনেও ফল বিক্রি জনপ্রিয় হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ দোকান।

ফলের মৌ মৌ ঘ্রাণে জ্যৈষ্ঠ মাস হয়ে উঠেছে মধুময়। জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই রাজধানীর ছোট-বড় বাজার ছেয়ে গেছে রসালো ফলে। আম, কাঁঠাল, লিচু, তালশাঁস, আনারস, জামরুলসহ নানান ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। মৌসুম শেষ হলেও বেল, বাঙ্গি ও তরমুজও পাওয়া যাচ্ছে ফলের দোকান ও আড়তে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও, শান্তিনগর, রামপুরা, বনশ্রী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে বর্তমানে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে আম ও লিচু। বিশেষ করে লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে এ সপ্তাহে। এ ফলটি বেশিদিন পাওয়া যায় না। তবে লিচুর দাম এ মুহূর্তে তুলনামূলক বেশি। একশ’ লিচু ৪০০টাকা থেকে লিচুর জাত বুঝে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজশাহী দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার লিচু বাজারে আসলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দাম কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

তবে ফলে চাষীরা যে দামে বিক্রি করেন আড়ত ঘুরে খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে দামে তারতম্য হয় বলে জানান ক্রেতারা।

বাজারে সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী থেকে আসা বাহারি নামের আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। প্রতিকেজি কালোজাম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। প্রতিটি তাল ৩০-৪০ টাকা, আনারস ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও ফুটপাতে ভ্যানে করেও মৌসুমি এসব ফল বিক্রি করছেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, গোবিন্দভোগ ১২০ টাকা, গোপালভোগ ১২০ টাকা, গুটি আম ১০০০ টাকায়। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির আম বিক্রি হচ্ছে।

জাম, কাঁঠালসহ অন্যান্য দেশি ফল তুলনামূলক দাম বেশি। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দাম সহনীয় ও সাধারণ ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে বলে জানান দোকানিরা।

বাজারে এ সময়ে পাকা কাঁঠালের সরবরাহ কম। কিছুদিনের মধ্যেই বাজার ছেয়ে যাবে কাঁঠালে আশা করছেন ফল ব্যবসায়ীরা। সবজি হিসেবে রান্না করার জন্য কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। এটি দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, আলুসহ পাঁচমিশালী সবজি দিয়ে কাঁঠাল রান্না এখন ভীষণ জনপ্রিয়।

খিলগাঁও রেলগেইট এলাকায় ফল বিক্রেতা আবু তাহের বলেন, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আম আসছে। আমের দাম তুলনামূলক কম। সব ধরনের আমের বিক্রিই ভালো।

রামপুরা এলাকায় ফল ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া বলেন, বাজারে যে লিচুগুলো এখন আসছে সেগুলো আকারে কিছুটা ছোট। আগামী সপ্তাহ থেকে বড় লিচু আসবে, দামও কিছুটা কমবে। পাকা কাঁঠালের একটা বড় অংশ আসে গাজীপুর ও সাভার থেকে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে পাকা কাঁঠালের সরবরাহ বাড়বে বলে তিনি জানান।

ব্যবসায়ীরা জানান, মধুমাস জ্যৈষ্ঠে আম, লিচু ও দেশি অন্যান্য ফলের কারণে বিদেশি ফলের চাহিদা কম থাকে। বনশ্রী এলাকায় ফল ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়ে মানুষ আম-কাঁঠাল ও দেশি ফল খাবে। তবে রোগীর জন্য অনেকেই মাল্টা, আপেল, আনাড় কিনছেন।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেশি বিভিন্ন ফলের দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্রেতাদের মাঝে।

ক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে আমের দাম ১০০ টাকার ওপরে থাকে। ভরা মৌসুমে কিছুটা কমে। শেষ দিকে আবার বেড়ে যায়।

অনেক ক্রেতা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিদেশি ফল সারাবছর দামের কারণে কিনে খেতে পারেননা। জ্যৈষ্ঠ মাস আসার অপেক্ষায় থাকেন তারা। সাধ্যের মধ্যে দেশি ফল কিনে খাওয়ার অপেক্ষা করেন।

মোহাম্মদপুরে রিকশাচালক নুরুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ফল কিনে খাবার সামর্থ্য হয় না তাদের। তাদের জন্য আম, কাঁঠাল হলো আশীর্বাদ।

আরেক ক্রেতা পলাশ মিয়া জানালেন, আম-লিচুর দাম সহনীয় হলেও দেশি অন্য ফলের দাম কিছুটা বেশি।

বাজার ঘুরে দেখে গেছে, দেশি কালোজাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। দাম তুলনামূলক বেশি। বিক্রেতারা বলেন, এসব ফলেরও বাণিজ্যিক চাষাবাদ বাড়ানো প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ মাসে সামর্থ্যে নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও সব শ্রেণি পেশার মানুষই দেশি ফলের স্বাদ নেন। এটি আমাদের দেশের ঐতিহ্য।

  • ফল
  • বিক্রি