ব্যাংক খাত: অচলায়তনের দেওয়াল ভাঙতেই হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক , সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫






                                        
                                       

দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়ম, লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আর কেউ ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়ে আত্মবিশ্বাস রাখে না। কারণ অধিকাংশ ব্যাংকের অবস্থা ভালো নয়। এর ফলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের পাশাপাশি কোটিপতিদেরও ব্যাংকে আমানত কমে যাচ্ছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের এক জরিপে দেখা গেছে, কোটি টাকার আমানতকারীদের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি কমেছে। এতে ব্যক্তিগত ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের আশঙ্কা কোটিপতিদের আমানত সরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থা ভবিষ্যতে আরও প্রকট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসলে, প্রথম দশটি ব্যাংক ছাড়া বাকিগুলো গভর্নর সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী ‘চলতে অযোগ্য’ অবস্থায় রয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সচল রাখতে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা আশাব্যঞ্জক। তবে শেষ পর্যন্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এই ব্যাংকগুলো লুটপাটের শিকার হয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে নামমাত্র কোম্পানি গড়ে ব্যাংকের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ওই সময়ের সরকার ও তার আশীর্বাদে ব্যাংকের উদ্যোক্তারা টাকাগুলো বিদেশে পাচার করে ডলারে রূপান্তর করেছেন। এর ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব বর্তমান সরকারের কাঁধে এসেছে।
বর্তমানে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকসহ বেশ কিছু সুদবাহী ব্যাংক রয়েছে, যেগুলোকে একীভূত করার মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। অন্যথায়, দুর্বল ব্যাংকগুলো টিকে থাকা অসম্ভব। অন্যান্য দেশে ব্যাংক ব্যবসায় ব্যর্থতা হলে তার দায় ব্যবসায়ী নিজেই নেন, কিন্তু বাংলাদেশে ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হয়। এই পরিস্থিতি দুঃখজনক। আমেরিকায় ব্যাংক ব্যর্থ হলে ব্যবসায়ী নিজের ক্ষতি বহন করে, কিন্তু বাংলাদেশে আমানতকারীরা প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি জানতাম লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংকের আড়ালে এমন ব্যর্থতা লুকিয়ে আছে?’
খেলাপি ঋণের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী সরকারের আমলে ব্যাংক ঋণের ৮৯% ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট সম্পদের ৯৪.৭৫% ঝুঁকিপূর্ণ এবং মোট ঋণের ৮৮.৭৬% ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যাংকগুলোতে ঋণের অধিকাংশই জালিয়াতির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে, যা ব্যাংক খাতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। আগামীতে খেলাপি ঋণ আরও বাড়লে ব্যাংকের মূলধনে চাপ পড়বে।
সরকার খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে কি? বাস্তবে অনেক খেলাপি ঋণের সম্পদ দেশে নেই, অনেকটাই পাচার হয়েছে। তাই খেলাপি ঋণ আদায় কার্যত কঠিন। ব্যাংক খাতের ক্ষতি পূরণ সম্ভব নয়। একমাত্র পথ হলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা, যা সরকার ইতোমধ্যে শুরু করেছে। একই অবস্থা লিজিং কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও। শক্তিশালী ব্যাংকগুলো আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যেমন ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক