প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। উৎসাহব্যঞ্জক এ ভাষণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, বিশ্বকে বদলে দেওয়ার মতো অভিনব সব ধারণা রয়েছে বাংলাদেশের। এসব ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। কীভাবে মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে সুখী হয়, এর বর্ণনা করে তিনি বলেন, টাকা উপার্জন করে মানুষ নিঃসন্দেহে আনন্দ পায়; কিন্তু অন্যকে সুখী করার মধ্যে নিহিত আছে অতিরিক্ত আনন্দ।
বস্তুত বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগে পিছিয়ে রয়েছে। জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না। এদেশে ব্যবসার পরিবেশ তথা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো বেশকিছু বাধা রয়েছে। এগুলো হলো-অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য, উচ্চ করহার ইত্যাদি। এছাড়া আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, নীতির ঘনঘন পরিবর্তন, সুশাসনের অভাব, আইনের জটিলতা, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি কারণেও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়ে থাকে। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা গেলে এদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কারণ, এখানে রয়েছে জনসংখ্যাগত সুবিধা। এদেশে রয়েছে সাড়ে ১৭ কোটিরও বেশি মানুষ, যাদের বড় অংশ তরুণ ও কর্মক্ষম। বড় বাজার এবং সস্তা শ্রমশক্তি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় এদেশের সঙ্গে ভারত, চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের রয়েছে সহজ যোগাযোগব্যবস্থা। দেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্যাক্স হলিডে, রপ্তানি প্রণোদনা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানির সুবিধা ইত্যাদি প্রদান করে থাকে। দেশে শতাধিক ইপিজেড ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মূলত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব অপার সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, এখানে বিনিয়োগ করলে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো এ অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে।
দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন মন্দাভাব বিরাজ করায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। এ কারণে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের সামাজিক অস্থিরতা। গতি পাচ্ছে না দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যক্রম। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, চাঁদাবাজি, মাস্তানিসহ সব ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অবস্থার পরিবর্তন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ; রেল, সড়ক ও নৌপথের যথাযথ উন্নয়ন এবং সমুদ্রবন্দরগুলোয় যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা বন্ধসহ দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা এদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন, আশা করা যায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে বিনিয়োগের যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।