ঝিনাইদহে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সর্মথকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন নারীসহ অন্তত ১০ জন। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের (আহত)।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি ওই গ্রামের (দিঘিরপাড়) মৃত শমসের আলী মোল্লার ছেলে মোশাররফ হোসেন (৫৫)।
বিএনপির দাবি নিহত তাদের দলের সর্মথক। অপরদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাবি করছে মোশাররফ আওয়ামী লীগের সর্মথক।
স্থানীয়রা জানান, ফুরসুন্ধি ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামের উত্তরপাড়ায় রোববার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পাশাপাশি বাড়ি বিএনপির সর্মথক টিপু ও আওয়ামী লীগের সর্মথক মুকুলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। রাত ৯টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি মেম্বার আলিমুদ্দিন ও তার সর্মথকরা প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা (সাবেক গ্রাম সরকার) আমজাদ বিশ্বাসের সমর্থক ৬-৭ বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় অন্তত ছয়জন বিএনপি সর্মথক আহত হন। পরে দিন সোমবার ফের সাবেক ইউপি মেম্বর জেলা বিএনপির অফিস ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ একাধিক মামলার আসামি আলিমুদ্দিন (ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা) ও ফুরসুন্ধি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাবেক গ্রাম সরকার আমজাদ বিশ্বাসের সর্মথকরা গ্রামের মধ্যপাড়ায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই দিনও আহত হয় বেশ কয়েকজন।
মঙ্গলবার সারা দিন দুইপক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। উভয়পক্ষ শক্তি বৃদ্ধি করে বুধবার গ্রামের ( দীঘিরপাড়) দক্ষিণপাড়ায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষ গ্রাম্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ ২৫০ বেড হাসপাতালে নেওয়ার পরে মোশাররফ হোসেনকে (৫৫) মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। অন্যান্য আহতদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ আগে থেকেই খবর জানতে পারলেও সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিশ।
গ্রাম্য সূত্র আরও জানিয়েছে, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে দিঘিরপাড় গ্রামের বিএনপি নেতা আমজাদ বিশ্বাসের সঙ্গে একই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে তুচ্ছ বিষয়ে প্রতিবেশী টিপু ও মুকুলের মধ্যে কথাকাটাকাটির ঘটনার পরস্পর বিরোধী দুই নেতার সর্মথকরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এবং প্রাণ যায় মোশাররফ হোসেনের।
এদিকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে নিহত ব্যক্তি বিএনপি নেতা আমজাদ বিশ্বাসের সর্মথক। অপর দিকে সংশ্লিষ্ট ফুরসুন্ধি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদ সিকদার (আওয়ামী লীগ নেতা) দাবি করেছেন নিহত ব্যক্তি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুদ্দিনের সর্মথক। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে অসংখ্য পরিবার। দুপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লহ আল মামুন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান চলছে।