র্যাপার থেকে রাজনীতিতে আসা জোহরান মামদানি পডকাস্টের নিয়মিত মুখ। উচ্চশিক্ষিত, বামপন্থী এই ডেমোক্র্যাট তরুণ পডকাস্টে কথা বলেই মন জয় করেছেন লাখো তরুণ-তরুণীর।
সম্প্রতি এক পডকাস্টে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি ডেটিং অ্যাপে ভরসা করতে পারেন কি না। উত্তরে জোহরান বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রী রামাকে আমি হিঞ্জে (ডেটিং অ্যাপ) খুঁজে পেয়েছি। তাই আমার ধারণা, ডেটিং অ্যাপে ভরসা রাখা যায়।
বিয়ের পর বিয়ের ছবি না প্রকাশ করার জন্য সমালোচিত হন জোহরান মামদানি। তখন কয়েকটি ছবি স্টোরিতে প্রকাশ করেছিলেন।
ছবি প্রকাশের পাশাপাশি জোহরান লিখেছিলেন, ‘আমার স্ত্রীর রাজনীতি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। সে নিরিবিলি নিজের মতো শিল্প সৃষ্টিতেই স্বাচ্ছন্দ্য। সে নিজের মতো বাঁচতে চায়। আমি চাইনি আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কারণে তার ব্যক্তিজীবনের গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়ুক।’
জোহরানের স্ত্রী রামার স্বতন্ত্র পরিচয়ে, নিরিবিলি পরিবেশে কাজ করা হয়তো সহজ হবে না। ইতিমধ্যে রাতারাতি বিশ্বের কোটি মানুষ কৌতূহলী হয়ে উঠেছে তাঁকে নিয়ে। তিনি এখন ট্রেন্ডে—‘পপুলার নাউ’।
২৭ বছর বয়সী রামা দুয়াজি ব্রুকলিনের মোটামুটি পরিচিত শিল্পী। অলংকরণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করার পর পুরোদস্তুর অলংকরণশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। অ্যানিমেটর ও সিরামিসিস্ট (মাটি বা সিরামিক দিয়ে নানা কিছু তৈরি করেন যিনি) হিসেবেও নামডাক আছে তাঁর।
রামার আঁকা ছবি দ্য নিউইয়র্কার, ভাইস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টসহ বেশ কিছু নামী পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
মাল্টিমিডিয়া আর্টিস্ট রামা দুয়াজি প্রো-প্যালেস্টেনিয়ান থিমে ছবি আঁকেন। আঁকা ছবি ও তৈরি শিল্পকর্মের মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিজের সমর্থন প্রকাশ করেন। ইসরায়েলের বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে তিনি শিল্পীসত্তার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে যান।
এদিকে জোহরান মামদানি ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাউডুইন কলেজ থেকে আফ্রিকান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতক করার সময় ‘জাস্টিস ফর প্যালেস্টাইন’ নামের এক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারের দাবি তুলে আলোচনায় এসেছেন।
রামা–জোহরান ভালোবাসেন গান ও শিল্প। জোহরান সাংস্কৃতিক আবহে বড় হয়েছেন। আর দুজনই ফিলিস্তিনে গণহত্যার ঘোর বিরোধী। এসব মিলই এই দুজনকে কাছে এনেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
জোহরানের জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। সাত বছর বয়সে মা–বাবার সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন তিনি। ২০১৮ সালে পান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব।
জোহরান মামদানির মা ভারতের মীরা নায়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সালাম বম্বে’ (১৯৮৮) অস্কারে মনোনীত হয়। ‘মনসুন ওয়েডিং’ (২০০১) ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার গোল্ডেন লায়ন জিতে নেয়। ‘দ্য নেমসেক’, ‘কুইন অব কাটউই’-এর মতো বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রে মীরা অভিবাসন, পরিচয়সংকট ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের গল্প বলেছেন গভীর মানবিকতায়।
মীরা হ্যারি পটার সিরিজের একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিশোর জোহরানই তখন তাঁকে ‘দ্য নেমসেক’ চলচ্চিত্রটি তৈরি করতে বলেন। এই সিনেমায় মার্কিন অভিনেতা কাল পেনকে কাস্ট করার জন্য মাকে অনুরোধও করেছিলেন জোহরান। মা যে সে সময় ছেলের কথা শুনেছিলেন, বলা বাহুল্য।
জোহরান মামদানির বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক। তিনি আফ্রিকান ইতিহাস, ঔপনিবেশিকতা ও জাতিসত্তা বিষয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত গবেষণা করেছেন। লিখেছেন বিশ্বজুড়ে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানশিক্ষায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই ‘সিটিজেন অ্যান্ড সাবজেক্ট’ ও ‘হোয়েন ভিকটিমস বিকাম কিলারস’।