জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ভাষণ দিয়েছেন, সেটিকে বহু কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ভাষণে তিনি নির্বাচনের সুস্পষ্ট সময়সহ ভোটসংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যার সারমর্ম হলো-রমজানের আগেই অর্থাৎ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে বুধবার (গতকাল) থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরুর কথা বলেছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেবেন। তার এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ ও সংশয়ের অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করি আমরা। এছাড়া তিনি বলেছেন, এবার প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কারণে ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তাই তিনি চান, এবার যেন মানুষ উৎসব-আনন্দের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য যথার্থ। বিগত স্বৈরাচারী আমলে মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছে। দেশে বহু বছর সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এ অধিকার ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবে, তারা অধীর আগ্রহ নিয়ে নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। কাজেই দ্রুত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে সবারই স্বাগত জানানো উচিত। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এ বিষয়ে অভিন্ন মতপ্রকাশ করা। দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো দল দৃশ্যমান সংস্কারের আগে নির্বাচন চায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। তবে বুঝতে হবে, অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পাদনের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজ শুরু করে হয়তো কিছুটা এগিয়ে নিতে পারবে। গণতান্ত্রিক সরকারকে তা সম্পন্ন করতে হবে। তাই অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া মনে রাখতে হবে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ এখনো কাটেনি। পতিত স্বৈরাচারের লোকেরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, ষড়যন্ত্রকারীরা ততই সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এ অবস্থায় সময়মতো নির্বাচন হওয়াটা জরুরি। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত সুসংহত করবে, যাতে দেশে আর কখনো স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। সেই সঙ্গে জুলাই আন্দোলন প্রতিরোধে যারা হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল, তাদের বিচারও নিশ্চিত করবে। এসব ব্যাপারে নির্বাচিত সরকারকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। কাজেই প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় দেশে অচিরেই নির্বাচনি আবহ তৈরি হবে, এটাই জনগণ দেখতে চায়। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত সব রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণই সরকারের জন্য সর্বোত্তম পথ বলে মনে করি আমরা।