দেওয়ানি ও ফৌজদারি এখতিয়ার অনুসারে পৃথক আদালত স্থাপনে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট।সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে নিউজ আপডেটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
নিউজ আপডেটে সুপ্রিমকোর্ট হেল্পলাইনের সাফল্য, বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের প্রস্তাবিত সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয়ের অধীনস্থ করে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব ও ঘুস গ্রহণের অভিযোগে বেঞ্চ সহকারীকে সুপ্রিমকোর্টের বরখাস্তের তথ্য তুলে ধরা হয়।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিমকোর্টের হেল্পলাইন সার্ভিস শুরু হওয়ার পর গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশ থেকে আইনি পরামর্শ, মামলা সম্পর্কিত তথ্য ও অভিযোগ দাখিল সংক্রান্ত মোট ২০২৬টি কল গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে আইনি পরামর্শ গ্রহণের কল আসে ১০৬৮টি। আর বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে ৭৭১টি কল আসে। সবগুলো ক্ষেত্রেই সেবাগ্রহীতাদের তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিমকোর্টের হেল্পলাইনের আদলে দেশের বিভিন্ন জেলা আদালতে নিজস্ব হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। সেসব হেল্পলাইনে ফোন করার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতারা সংশ্লিষ্ট আদালত সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছেন।’
গণসংযোগ কর্মকর্তা জানান, সুপ্রিমকোর্টে আসা কোনো বিচারপ্রার্থী বা সেবাগ্রহীতা সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রির কোনো শাখায় সেবা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে বা সেবা গ্রহণ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সহায়তা করার জন্য গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্ট হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতি রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ওই হেল্পলাইন সার্ভিস থেকে সেবা গ্রহণ করা যায়। একই সঙ্গে হেল্পলাইন নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ ও মোবাইল অ্যাপ সার্ভিস চালু রয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে- বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হেল্পলাইনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি বরাবর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মোট ৩৪টি অভিযোগ এসেছে। সেসব অভিযোগগুলো সুপ্রিমকোর্টের এখতিয়ারবহির্ভূত হওয়ায় হেল্পলাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগকারীকে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনার আলোকে বিচারসেবা প্রদানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে একজন বেঞ্চ সহকারীকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দুদক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৪’ এর খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ নাম পরিবর্তন করে ‘সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান গণসংযোগ কর্মকর্তা। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্ডেনে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি ও দেশের জেলা আদালতগুলোতে কর্মরত বিচারকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। প্রধান বিচারপতি ঘোষিত সে রোডম্যাপে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণ বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিমকোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গত ২৭ অক্টোবর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। সে পত্রে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অধস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথরূপে পালনের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইন এবং বিচার বিভাগকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রস্তুতকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বলে গণসংযোগ কর্মকর্তা জানান।