জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের দুই সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার দাস এবং সুপ্রভাত পালের শিক্ষা ছুটি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে তাদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ মার্চ বেলা ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্যদিকে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিচার ও চাকরিচ্যুতির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফল জালিয়াতি, শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য এবং পরিকল্পিতভাবে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগের বিচার ও চাকরিচ্যুতি করার দাবিতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা টানা ৯০ দিন ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
‘জুলাই আন্দোলনে’ গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্য গঠিত ‘আইনি সহায়তা সেল’-এর নেতৃত্বে ছিলেন তাপস কুমার দাস।
অভিযোগ রয়েছে, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও দক্ষ আইনজীবী উপেক্ষা করে তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অদক্ষ আইনজীবী নিয়োগ দেন। এতে শিক্ষার্থীদের জামিন প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, তারা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে ফিরে না আসেন, তাহলে প্রশাসন আরও একটি সতর্ক বার্তা দিতে পারে কিংবা চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে পারে। ইতোমধ্যে অভিযোগ তদন্তে স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন অনুষদ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক কাওসার আলম কাজল বলেন, আমাদের একটাই দাবি, এ ধরনের শিক্ষক যেন আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ফিরে এসে নতুন করে কোনো শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালাতে না পারেন।
কাওসার আলম কাজল বলেন, আমরা তিন মাস ধরে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করেছি কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং আমাদের প্রিয় বিভাগের সুষ্ঠু পরিবেশ, ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায়বদ্ধতা থেকে। তিনি যোগ করেন, ফলাফল জালিয়াতি, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অশোভন আচরণ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও প্রাক্টিসিং মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব কোনো শিক্ষকের আচরণ হতে পারে না। আমরা দেখছি তারা নিয়মিত এগুলো করে আসছে। আমরা এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী।
তিনি বলেন, প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, আমরা আশা করি এই তদন্ত হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। আমরা চাই এই শিক্ষকদ্বয়কে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হোক, যাতে আমাদের বিভাগ আর কখনোই এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হয়।
আইন বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কোনোভাবেই চান না এই দুই শিক্ষক পুনরায় বিভাগে ফিরে এসে আগের অনিয়ম ও অপকর্ম চালাতে পারেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস পাওয়ায় তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরে ক্লাস শুরু করে।