নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ১৫৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবারের পক্ষ থেকে অংশ নিয়েছিলেন তারই প্রপৌত্র চিত্রনায়ক নাইম। এদিন তিনি আলোচনার একপর্যায়ে নবাব সলিমুল্লাহর পরিবারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেদিন অনুষ্ঠান চলার সময়ে নাইমের দাবি মেনে নেয়। এতে কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা পোষণ করেছেন নাইম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ঢাকার চতুর্থ নবাব, ব্রিটিশ রাজত্বের সময়কার উপমহাদেশের অন্যতম রাজনীতিবিদ, পূর্ব বাংলার শিক্ষা বিস্তারের অন্যতম ব্যক্তিত্ব খাজা সলিমুল্লাহ। তিনি ১৯১১ সালের আগস্টেই কার্জন হলে এক রাজনৈতিক সমাবেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। পরে তাঁর এই দাবি সর্বজনীন রূপ পায় ১৯১১–তে বঙ্গভঙ্গ বাতিলের পর। সলিমুল্লাহর দান করা ৬০০ একর জমিতেই ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ৭ জুন ছিল তাঁর ১৫৩তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে সম্প্রতি নানা আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেন নবাব পরিবারের বংশধর ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক নাইম। ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহর পরিবারের অন্য সদস্যরাও।
নাইম বলেন, ‘আমাদের পরিবার কিন্তু অবিভক্ত ভারত থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। নবাব সলিমুল্লাহ সাহেব সেই ব্রিটিশ আমলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জায়গা দিয়েছিলেন। তখন বাংলাদেশ তো দূরের কথা, পাকিস্তানেরও জন্ম হয়নি। ক্ষণজন্মা এই গুণী মানুষ মাত্র ৪৩ বছর বেঁচেছিলেন। এই স্বল্প সময়ে তিনি এখানকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। অথচ গত কয়েক দশকে মহান মানুষটির অবদান অস্বীকার করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কোনো জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালিত হয়নি। আমরা যখন স্কুলে পড়েছি, তখন সলিমুল্লাহকে নিয়ে পাঠ্যসূচিতে অধ্যায় ছিল। সেটাও পরে তুলে দেওয়া হলো। তাহলে বর্তমান প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে জানবে কীভাবে?’
দাবি প্রসঙ্গে নাইম বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম প্রতিবছর যেন নবাব সলিমুল্লাহর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। তাঁর নামে একটা রিসার্চ কেন্দ্র করা হয়, শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তির ব্যবস্থা চালু করা হয়। পাঠ্যসূচিতেও তাঁকে যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন নবাব সলিমুল্লাহর নামের চেয়ার স্থাপন করা হয়। মাঝে আমরা শুনেছিলাম, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ভেঙে সেখানে নতুন ভবন তৈরি করা হবে। আমরা জানিয়েছি, এটা ঐতিহ্যের অংশ, কোনোভাবে ভাঙা যাবে না। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সংস্কারকাজ কীভাবে করা যায়, তাই যেন করা হয়। আমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সানন্দে মেনে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের পরিবার কৃতজ্ঞ।’
কথা প্রসঙ্গে নাইম বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ আমার আব্বার আপন দাদা ছিলেন। সেই সূত্রে আমি তাঁর প্রপৌত্র। আমাদের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়েছে। কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং অধ্যাপক মুহাম্মাদ রুহুল আমিন ও মুহাম্মদ ওমর ফারুককে। দিনজুড়ে ছিল আয়োজন। শিক্ষার্থীরাও দিনটি আনন্দের সঙ্গে উদ্যাপন করেছেন। নবাব সলিমুল্লাহ সম্পর্কে তাঁদের আগ্রহ দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে।’
কথা হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। ‘নবাব সলিমুল্লাহ পরিবারের দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’ তিনি বললেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেয়, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই—নবাব সলিমুল্লাহকে যথাযথ সম্মান ও তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সত্যি বলতে, গত ১৮ থেকে ২০ বছরে নবাব সলিমুল্লাহ সাহেবের যে অবদান, তা খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নতুন ভাইস চ্যান্সেলর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি যখন হল পরিদর্শনে আসেন, তখন আমাকে জানালেন, নবাব সলিমুল্লাহকে আমরা যেন যথাযথভাবে সম্মান জানাই এবং তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী ঠিকঠাকভাবে পালন করি। অবশ্য আমার নিজেরও আগ্রহ ছিল তাঁকে নিয়ে কাজ করার। তাই সলিমুল্লাহর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি এবং গবেষকদের সঙ্গেও আলাপ করি। কারণ, নবাব সলিমুল্লাহর ব্যাপারগুলো সামনে নিয়ে আসা উচিত। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫৩তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নবাব সলিমুল্লাহর পরিবারের ৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন,‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গেও আলাপ করি, তাঁর অবদান কীভাবে ডকুমেন্টেড করা যায়। এরই মধ্যে তাঁকে নিয়ে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। রিচার্স সেন্টারের পরিকল্পনাও চলছে। চেয়ারের বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভবনের বিষয়ে বলব, গত ৪ বছর এই হলে নতুন শিক্ষার্থী নেওয়া বন্ধ ছিল, পরশুদিন থেকে আবার নতুন শিক্ষার্থী নেওয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি হল ভবনের বর্তমান অববয়কে ঠিক রেখে যেভাবে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দরকার, তা করব।’