প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ৭, ২০২৫, ৭:৫৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ৬, ২০২৫, ৪:০৬ অপরাহ্ণ
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুদানে সেনাবাহিনী ও র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর দেশটি কার্যত গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। এই পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সুদান বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন।
সংস্থাটি জানায়, সুদানের ১৮টি রাজ্যের ১৮৫টি এলাকার ১০ হাজার ৯২৯টি স্থান থেকে ৯৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫১ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দক্ষিণ দারফুর, উত্তর দারফুর ও মধ্য দারফুরের মানুষ।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংঘাতে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ উভয়ের বিরুদ্ধেই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, আরএসএফ দারফুরে নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত, যা জাতিসংঘ গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরোধ, অনাহার ও বোমাবর্ষণের পর গত ২৬ অক্টোবর আরএসএফ এল-ফাশের ও এর আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকে ৮১ হাজার ৮১৭ জন মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই পায়ে হেঁটে গেছেন। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও মুক্তিপণের জন্য অপহরণের মতো অপরাধ করছে। এছাড়া, কলেরা ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে ওই এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে সুদানের কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে গেছে, যা খাদ্য সংকটকে আরও তীব্র করেছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পূর্ব চাদে আশ্রয় নিয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। চাদ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৬ লাখের বেশি সুদানি নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তবে সেখানেও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
ফারচানা শিবিরের শরণার্থীরা জানিয়েছেন, তারা চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এবং খাবারের জন্য শহরের বাজারে ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। দারফুরের জমজম বাস্তুচ্যুতি শিবিরে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন এবং ২৬ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন।
ভুক্তভোগীদের বর্ণনা অনুযায়ী, পালানোর পথে বহু মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, আটকানো হচ্ছে বা তাড়া করা হচ্ছে। আরএসএফ যোদ্ধারা বয়স, লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে আলাদা করে মুক্তিপণ দাবি করছে, যা আট হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
তাওইলায় পৌঁছানো ফাতিমা আব্দুল রহিম জানান, আরএসএফ সদস্যরা তাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এবং তাদের দলের মেয়েদের ধর্ষণ করেছে। রাওয়া আবদাল্লাহ নামের এক তরুণী জানান, তার বাবা এখনো নিখোঁজ।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানায়, গত ২৯ অক্টোবর আরএসএফ এল-ফাশের মাতৃসদন হাসপাতালে অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করেছে, যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সুদানের এই মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত আন্তর্জাতিক সহায়তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।