কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এ মুহূর্তে প্রয়োজন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক , মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫






                                        
                                       

ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন এবং দেশ থেকে পলায়নের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ইতোমধ্যেই আট মাস অতিবাহিত হয়েছে। নানা ধরনের জটিল সংকট মোকাবিলা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। একটি সরকারের জন্য আট মাস খুব একটা দীর্ঘ সময় নয়। তাই এখনই এ সরকারের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার এমন এক সময় রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, যখন দেশের প্রতিটি সেক্টর বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল। বিগত সরকার তার সাড়ে ১৫ বছরের একটানা দায়িত্ব পালনকালে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে দলীয়করণ-আত্মীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। পুরো দেশ যেন একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব জটিল সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তার কোনোটিই এ সরকারের আমলে সৃষ্ট নয়। সমস্যাগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত।

এমন অনেক সমস্যা বিরাজমান, যা বিগত সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, দেশের অর্থনীতিতে বিগত প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা সৃষ্টি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিতে একপর্যায়ে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ০১ শতাংশে উন্নীত হয়, যা ছিল বিগত ৪০ বছরের মধ্যে দেশটির সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) সেই সময় পলিসি রেট একাধিকবার বৃদ্ধি করে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং অধিকাংশ দেশই এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুকরণে একাধিকবার পলিসি রেট বৃদ্ধি করে। আগে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ, বর্তমানে তা ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পলিসি রেট বৃদ্ধির মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বহুল ব্যবহৃত একটি কৌশল। পলিসি রেট বৃদ্ধির সূত্রটি হচ্ছে এ রকম-যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বৃদ্ধি করে, তাহলে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও আনুপাতিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষ ও উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। অবশ্য এর একটি খারাপ দিকও আছে। পলিসি রেট বৃদ্ধি করা হলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বারবার বৃদ্ধি করলেও ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বিগত সরকারের আমলের শেষের দিক পর্যন্ত ৯ শতাংশে সীমিত করে রাখা হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, সরকার সমর্থক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর জন্য তুলনামূলক কম সুদে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতেই এ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির উচ্চহার কমেনি। অন্তর্বর্তী সরকার আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অথচ কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলার ১২২/১২৩ টাকায় বিক্রি হতো। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রার বেশি অর্থ পাওয়ার প্রত্যাশায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করতেন। একইভাবে পণ্য রপ্তানিকারকরা রপ্তানি আয়ের পুরোটা দেশে আনতেন না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বর্তমানে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হচ্ছে। প্রতি মার্কিন ডলার এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছে। গত মার্চে অর্থাৎ রোজার মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করেছে, যা এযাবৎকালের মধ্যে এক মাসে প্রেরিত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয় এবং পণ্য রপ্তানি আয় বৈধপথে দেশে আসার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে।

দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের পরিমাণ কমে যাচ্ছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার চীন সফরকালে চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। সম্প্রতি রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’। ৫০টি দেশের ৫৫০ বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে আগত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে আগে থেকে পাইপলাইনে থাকা বিনিয়োগ প্রস্তাবও রয়েছে।

বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচারকৃত এ অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ প্রত্যর্পণসংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি এবং সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব জটিল সমস্যা মোকাবিলা করে চলেছে, তা হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। এগুলোর সমাধানে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে। বিগত সরকারের আমলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে যে অর্থ লোপাট করা হচ্ছিল, তার রাশ টেনে ধরা হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যে খাতে সাফল্য সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছে, তা হলো পররাষ্ট্রনীতি। বাংলাদেশ এখন আর কারও প্রতি নতজানু হয়ে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করছে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে গমন করেন। চীন সফরকালে বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের আওতায় আগামীতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ড. ইউনূস চীনা কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ৫০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রদানের অনুরোধ করেছেন। ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। চীনের সহায়তার বাংলাদেশ তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে রিজার্ভার তৈরির উদ্যোগ নিতে পারে। বিগত সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে যেসব অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। চীন সফরকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন, তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারত সেভেন সিস্টার্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অতীতে বাংলাদেশের আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান এ ধরনের পরিষ্কার বক্তব্য প্রদান করতে পারেননি।

থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সপ্রতিভ উপস্থিতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকারের ঘটনাটি ছিল চোখে পড়ার মতো। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন সাক্ষাৎকারের জন্য নির্ধারিত কক্ষে প্রবেশ করেন, তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফর সঙ্গীরা ড. ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানান। আলোচনাকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশের পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে কিছু না বললেও তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের একজন হাই পাওয়ার্ড সদস্যের সঙ্গে বৈঠকের সময় মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে ব্যাপক গণহত্যা শুরু হলে প্রায় ৮ লাখ মুসলমান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বিগত সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও মিয়ানমার তাতে কোনো সাড়া দেয়নি। ড. ইউনূস চীন সফরকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের সহায়তা কামনা করেন। এর ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আশার আলো দেখা দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য প্রদর্শন করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বিগত সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করা হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য নানা ধরনের অন্যায় কর্মে নিয়োজিত ছিল। তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে থানা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে পুলিশ বাহিনী কার্যত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই কথা প্রযোজ্য আমলাদের ক্ষেত্রে। বিগত সরকারের প্রতি অনুগত আমলাদের একটি অংশ বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমি ষাটের দশক থেকে চিনি। তিনি কোনো ব্যাপারেই হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো মানুষ নন। বর্তমান বিশ্বে যে ক’জন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে থাকেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের মধ্যে অন্যতম। তার প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করা প্রয়োজন। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তা দূর হবে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রশ্নাতীত ঐক্য বজায় রাখা। সৃষ্ট ঐক্য বিনষ্ট হলে তা জাতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে, তা দ্রুত নির্ধারণ করা যেতে পারে। অন্য যেসব সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন, তা দ্রুত শুরু করতে হবে। সংস্কার কার্যক্রম এমনভাবে শুরু করতে হবে, যেন নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা।

যতই দিন যাবে, মহলবিশেষ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে, কোনো ব্যাপারেই তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য ধারণ করা এবং এ সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানপূর্বক জনগণের পছন্দনীয় সরকারের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, সময় ও সুযোগ বারবার আসে না। আমরা এর আগেও একাধিকবার উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছিলাম; কিন্তু আমাদের অপরিণামদর্শিতার কারণে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এবার যেন তেমনটি না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য ব্যতীত কোনোভাবেই উদ্দেশ্য সাধন করা যাবে না।

  • অন্তর্বর্তী সরকার
  • ড. মুহাম্মদ ইউনূস
  • প্রধান উপদেষ্টা