ইরান হামলায় কেন ব্যবহৃত হলো বি-২ বোমারু বিমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক , রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫






                                        
                                       

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ দানব-বি-২ বোমারু বিমান। এক নিঃশ্বাসে উড়তে পারে ১১,০০০ কিলোমিটার। হাজার হাজার মাইল দূরের শত্রু এলাকা অতিক্রম করে, রাডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্ভুলভাবে আঘাত হানার ক্ষমতা এই বিমানকে আধুনিক যুদ্ধের এক অপরাজেয় প্রতীক বানিয়েছে।

ব্যাটের মতো আকার, উচ্চতর স্টিলথ প্রযুক্তি আর বিশাল অস্ত্র বহনের সক্ষমতা একত্রে বি-২-কে করে তুলেছে এমন এক ‘আকাশদস্যু’, যা যে কোনো গোপন অভিযানে দমে যাওয়া ছাড়াই পৌঁছাতে পারে গোপন লক্ষ্যে। ডাক পড়লেই মিসৌরির হোয়াটম্যান ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে হামলা চালায় হাজার হাজার মাইল দূরের ভূ-তল লক্ষ্যবস্তুতে।

আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া আর গতবছর ইয়েমেনের হুথি ঘাঁটির পর মধ্যপ্রাচ্যের পঞ্চমতম দেশ হিসাবে ইরানে হামলা চালাল বি-২ দানব। ইকনোমিকস টাইমস, দ্য ডেইলি মেইল, এনডিটিভি।

ইরান হামলায় কেন ব্যবহৃত হলো বি-২ বোমারু বিমান: ইরানের হামলায় বি-২ বিমানগুলোতে বহন করা হয়েছিল জিবিইউ-৫৭এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) নামের একটি ৩০,০০০ পাউন্ড বা প্রায় ১৩,৬০০ কেজি ওজনের ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা।

এই বিশেষ ধরনের বোমা নির্মিতই হয়েছে এমন স্থাপনাগুলোর জন্য, যেগুলো পাহাড় বা মাটির ২০০ ফুট গভীরে (৬০ ফুট কংক্রিট) নির্মিত স্থাপনা লন্ডভন্ড করে দিতে পারে। শত্রুপক্ষের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সুরক্ষিত।

ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাও এমনই একটি লক্ষ্যবস্তু যা একটি পর্বতের নিচে নির্মিত এবং চারপাশে রয়েছে বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই অভিযানে ছয়টি এমওপি বোমা ফেলা হয় ফোর্দো স্থাপনায়।

ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে পাহাড়ের গভীরে নির্মিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো জটিল ও বিপজ্জনক মিশনের জন্য বি-২ স্পিরিট ছাড়া আর কোনো বিমান ছিল না। আকাশ শক্তির এমন এক প্রতীক, যা চুপিসারে আসে, লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে দিয়ে যায়, কিন্তু ধরা পড়ে না।

কতদূর উড়তে পারে: বি-২ স্পিরিট বিমানের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর দূরপাল্লার উড়ান ক্ষমতা। এটি একটানা ৬,০০০ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। কোনো জ্বালানি ছাড়াই।

এই পরিসীমার কারণে এটি মূল যুক্তরাষ্ট্র থেকে মিসর, আফগানিস্তান, লিবিয়া কিংবা সর্বশেষ ইরান পর্যন্ত মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। দীর্ঘ সময় আকাশে থাকার জন্য প্রয়োজনে এটি মাঝপথে আকাশেই জ্বালানি গ্রহণ করতে পারে।

কী বহন করতে পারে :

বি-২ বিমানের বোমা বহনের ক্ষমতা ৪০,০০০ পাউন্ড বা প্রায় ১৮,১৪৪ কেজি। এর বহনক্ষমতার কারণে এটি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে সক্ষম হয়। যা মিশনের ধরন ও লক্ষ্য অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। বিমানটি দুইটি জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) বহন করতে পারে।

যার মোট ওজন প্রায় ৬০,০০০ পাউন্ড হতে পারে। এছাড়া এটি ৮০টি ৫০০-পাউন্ড ওজনের এমকে-৮২ বোমা অথবা ১৬টি ২,০০০-পাউন্ড ওজনের জিডিএএম (জিপিএস-নির্ভর স্মার্ট বোমা) বহন করার ক্ষমতাও রাখে।

পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রেও বি-২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একবারে ১৬টি বি-৬১ বা বি-৮৩ জাতীয় পারমাণবিক বোমা বহন করতে সক্ষম।

এই বহুমুখী ও শক্তিশালী অস্ত্র বহনের ক্ষমতা বি-২ বিমানকে একটি অত্যন্ত কার্যকর ও নমনীয় স্ট্র্যাটেজিক বোমারু বিমান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

  • ইরান-ইসরাইল সংঘাত
  • যুদ্ধ