এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে বরাবরের মতো সাফল্য ধরে রেখেছে ঢাকার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে এরা। এর নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ত্রিমুখী প্রচেষ্টা। ফলাফল প্রকাশের পর ক্যাম্পাসে আনন্দে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। খুশিতে সহপাঠীরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন, আনন্দের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে তুলেছেন ছবি-সেলফি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উল্লাসে যোগ দেন শিক্ষকরাও। সন্তানদের ফলাফলে আনন্দে আপ্লুত অভিভাবকরাও। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র মিলেছে।
ভিকারুননিসা : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাশের হার ৯৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩২৬ জন। মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ১২০ জন। ফেল করেছে ৫৫ জন। এতে সুনামের ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম জানান, এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ১২০ জন, এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২ হাজার ১১৬ জন। পাশ করেছে ২ হাজার ৬১ জন শিক্ষার্থী, অকৃতকার্য হয়েছে ৫৫ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করেছে ১ হাজার ৮৩৮ জন, ফেল করেছে ৩৭ জন। মানবিক বিভাগে পাশ করছে ৪১ জন, ফেল করেছে ৮ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় পাশ করেছে ১৮২ জন, ফেল করেছে ১০ জন। বৃহস্পতিবার দুপরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস পরীক্ষা চলছে। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির হলরুমে ফল প্রকাশের আয়োজন করে। অধ্যক্ষসহ শিক্ষকবৃন্দ দুপুর সোয়া ২টায় ফলাফল প্রকাশ করেন। এ সময় পাশ করা অনেক শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষকদের জড়িয়ে ধরে আনন্দে কান্না শুরু করেন। জুনিয়র শিক্ষার্থীরা ড্রাম-বাজনা বাজিয়ে আনন্দ করেন।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ : ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আবারও প্রমাণ করল তাদের সাফল্যের ধারা। এবারের ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে অংশগ্রহণকারী ৮২৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৩৩ জনই পেয়েছে জিপিএ-৫, যা শতকরা হিসাবে ৮৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগে অংশগ্রহণ করে ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ৭১১ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এখানে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ৯১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫২ জনের মধ্যে ২২ জন পেয়েছে জিপিএ-৫; এ বিভাগে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। সে জানায়, আমাদের কলেজে পড়াশোনার পরিবেশ খুব ভালো। নিয়মিত পরীক্ষা, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং নিজেদের পরিশ্রমই এই সফলতার পেছনে কাজ করেছে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুনীর আহমেদ বলেন, এই ফলাফল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং কলেজ প্রশাসনের সম্মিলিত পরিশ্রমের ফসল। আমরা শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি না, ছাত্রছাত্রীদের নৈতিকতা, মননশীলতা ও আÍবিশ্বাস তৈরির দিকেও গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা গর্বিত আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে।
উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ : এ বছর মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে মোট ১৮৬৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং পাশ করে ১৮১৪ জন। পাশের হার ৯৭ দশমিক ২১ শতাংশ। পাশ করাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৬৩ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৫৮৬ জন শিক্ষার্থী এবং পাশ করে ১৫৫২ জন। পাশের হার ৯৮ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে ৬৫৫ জন। অন্যদিকে, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ২২৮ জন শিক্ষার্থী এবং পাশ করে ২১০ জন। কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, এটি একটি গৌরবময় অর্জন যা সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে সম্ভব হয়েছে।
উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাশের হার শতভাগ। ফল প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা স্কুলের ভেতর ও বাইরের রাস্তায় আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন। কেউ কেউ এ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে তুলছেন সেলফি, কেউ একে অপরকে জড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। অনেক অভিভাবকও উপস্থিত ছিলেন। স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাহিয়া তাহসিন বলেন, ‘মনে একটু ভয় ছিল সরকার পরিবর্তনের কারণে ফলাফলে কোনো সমস্যা হবে কিনা। তবে প্রত্যাশিত রেজাল্ট, জিপিএ-৫ পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।’ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আশরাফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্কুলে মোট ২৭৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। শতভাগ পাশ করেছে। ১৭৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ৯০ জন পেয়েছে জিপিএ-৪ এবং ৭ জন জিপিএ-৩। দ্বিতীয় বারের মতো এবারও আমরা শতভাগ পাশের ধারা ধরে রাখতে পেরেছি।’
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ : এ বছর মনিপুর স্কুলে মোট ৪১৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪১৩৭ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে ৩৭৯৬ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য ও ৩৪১ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। পাশের হার শতকরা ৯১.৭৬ । জিপিএফাইভপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৩৮ জন।
সেন্ট জোসেফ স্কুল : রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেন্ট জোসেফ স্কুলে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ সফলতা এসেছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে ১৬৪ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবাই পাশ করেছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৬২ জন ও ব্যবসা বিভাগ থেকে ২ জনসহ মোট ১৬৪ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে পাশ করেছে। এদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ইংরেজি ভার্সন থেকে ৫৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং বিজ্ঞান বিভাগের বাংলা ভার্সন থেকে ৯৭ জনসহ মোট ১৫০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্কুলের এসএসসির ফলাফল : প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঈর্ষণীয় ফলাফল করেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুলে মোট ২৫৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৫৩ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৯৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এছাড়া মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৬ জন। লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত অপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুলে ২৭৬ জন পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে ২৬৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৯৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯০ জন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ২৪৬ জন পরীক্ষা দিয়ে ২৪১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৯৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮ জন। ঢাকা গভ. মুসলিম হাই স্কুলে ১৫৮ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৩৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ জন। বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৪২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২২৩ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭১ জন।